ফাঁসির আগে শেষ যে কথা বলেছিলেন মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৩, ০৯:৫৪ এএম
ফাইল ছবি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় একমঞ্চে একই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিট থেকে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (৫৫) ও জাহাঙ্গীর আলমকে (৩৫) ৩০ মিনিট দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে পাঠানো হয়।
এর আগে রাত ৯টার দিকে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি দুই আসামিকে জানিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এর পর তাদের গোসল করিয়ে খাবারের বিষয়ে শেষ ইচ্ছা আছে কিনা- জানতে চাওয়া হয়। পরে কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা মোজাহিদুল ইসলাম তাদের তওবা পড়ান। এর পর ১০টার আগেই তাদের ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাতে কেন্দ্রীয় কারাগারে বাইরে মাওলানা মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ফাঁসির আগে দুই আসামি ফিজিক্যালি ১০০% ফিট ছিল। আমার ইমাম হিসেবে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে তওবা পড়ানোর জন্য যে দায়িত্ব ও কর্তব্য দেওয়া হয়, আমাকে তারা সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করার জন্য যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। তারা (দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি) আমার সঙ্গে সুস্থ এবং সাবলীলভাবে তওবা, ইস্তেগফার এবং কালিমা পড়েছে এর পর আমি তাদের জন্য দোয়া করে আমার কর্তব্য পালন করে চলে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, তারা নামাজ পড়ার সুযোগ চেয়েছিল। তাদের সে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মহিউদ্দিন সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়েছেন। এ ছাড়া কারও মধ্যে কোনো উত্তেজনা ছিল না।
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করেন মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর । এ সময় জাহাঙ্গীরের বাবা আজিম উদ্দিনসহ পরিবারের ৩০ সদস্য তার সঙ্গে শেষ দেখার সুযোগ পান। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরের দুই ভাই, ভাবি ও ফুপু ছিলেন।
এদিন দুপুর ১টায় তাদের দেখা করার জন্য রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটক ঢোকানো হয়। জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে তাদের কারাগারের পেছনের গেট দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।
সাক্ষাৎ শেষে জাহাঙ্গীর আলমের ভাই মিজানুর রহমান জানান, দেখা করার সময় জাহাঙ্গীর একেবারেই বিমর্ষ ছিলেন। বলেছেন তিনি ন্যায়বিচার পাননি। শেষ দেখা হওয়ায় পরিবারের সবার কাছে ক্ষমা চান। বলেন এটিই তার শেষ দেখা। নিজের দাফন-কাফন ও কোথায় কবর দেওয়া হবে সেসব বিষয়েও কিছু বলেননি।
মিজানুরের স্ত্রী লতিফা বেগম জানান, তিনি দেবরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে কিনা বা কিছু খাবেন কিনা। কিন্তু জাহাঙ্গীর বলেন, তিনি কিছুই খেতে চান না। খুবই মন খারাপ ছিল তার। পরিবারের সবাইকে ভালো থাকার জন্য বলে কান্নাকাটিও করেছেন। এর পর পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। আর বিশেষ কিছুই বলেননি জাহাঙ্গীর।
এদিকে আইনি সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। কিন্তু গত ২৬ জুন রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দেন। প্রাণভিক্ষার আবেদনের চিঠি গত ৫ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। তখন থেকে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি শুরু হয়। তৈরি হয় ফাঁসির মঞ্চ।