বন্ধুর বোনকে রক্ত দেওয়ার কথা বলে বের হয়ে খুন হলেন কলেজছাত্র
ফরিদপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩, ০৬:২১ পিএম
কাছের বন্ধু হৃদয়ের ফোন পান ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রান্ত মিত্র (২৩)। বন্ধুর বোনের সিজার অপারেশন হবে। তাই রক্ত দিতে সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে হাসপাতালে রওনা হন। মা-বাবাকে এমন কথা বলে শহরের গোয়ালচামট ওয়্যারলেসপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে বের হন প্রান্ত মিত্র। রাত পার হলেও সে আর বাসায় ফেরেনি।
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে আলীপুর এলাকার বড় ব্রিজের রাস্তার পাশে প্রান্তর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে স্বজনেরা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে প্রান্তর লাশ দেখতে পেয়ে আহাজারি শুরু করেন। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে প্রথমে কোতোয়ালি থানায় এবং পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে ঘাতকদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি এমএ জলিল।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শহরের গোয়ালচামট মহল্লার ওয়্যারলেসপাড়ার একটি ভাড়া বাসায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন প্রান্ত মিত্র। তিনি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে পড়ালেখা করতেন। পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। মাঝে-মধ্যে আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়েও তাকে দেখা যেত।
প্রান্তের বাবা বিকাশ মিত্র জানান, সোমবার রাত ২টার দিকে তার বন্ধু হৃদয় ফোন করে বলেন, তার বোনের রক্ত লাগবে। তাকে রক্ত দেওয়ার জন্য রাতেই সে হাসপাতালে ছুটে যায় কিন্তু সারারাত বাসায় না ফিরলে আমরা ভোরে প্রান্তের মোবাইলে ফোন করি; কিন্তু ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে প্রান্তের বন্ধু হৃদয়কে ফোন করলে সে বলে প্রান্ত কোথায় জানি না।
পরে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে জানতে পারি আলীপুর ব্রিজের কাছে একটি লাশ পড়ে আছে। আমরা সেখানে গিয়ে প্রান্তের রক্তাক্ত লাশটি দেখতে পাই। আমার ছেলের কোনো শত্রু ছিল না। সে সব সময় মানুষের উপকার করত। আমার ছেলেকে কেউ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমি খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার চাই।
স্থানীয়দের ধারণা, পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রান্তকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। যেখানে লাশটি পড়ে ছিল সেখানে কিংবা আশপাশে কোনো রক্তের দাগ দেখা যায়নি। তাদের ধারণা অন্য স্থানে খুন করে রাস্তার পাশে লাশটি ফেলে রেখে যায় খুনিরা।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। কোতোয়ালি থানার এসআই মো. শামীম হোসেন জানান, খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। লাশের শরীরের বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। ময়নাতদন্তের পরই জানা যাবে খুনের আসল রহস্য।
কোতোয়ালি থানার ওসি এমএ জলিল বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।