Logo
Logo
×

সারাদেশ

টেকনাফের গহীন পাহাড়ে আরসার টর্চার সেলের সন্ধান

Icon

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৩, ০৮:১১ পিএম

টেকনাফের গহীন পাহাড়ে আরসার টর্চার সেলের সন্ধান

কক্সবাজার জেলার টেকনাফের গহীন পাহাড়ের গোপন আস্তানা থেকে আরসার সামরিক কমান্ডারসহ গ্রেফতার ছয় সদস্য ছবি: যুগান্তর

কক্সবাজার জেলার টেকনাফের গহীন পাহাড়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) তৈরি গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। আস্তানা থেকে আরসার সামরিক কমান্ডারসহ ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয় সাতটি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও নগদ টাকা।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকার গহীন পাহাড়ে এ অভিযান চালানো হয়। গ্রেফতার হওয়া আরসার শীর্ষ সামরিক কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদ। তিনি কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা। গ্রেফতার হওয়া অপর পাঁচ সদস্য হলেন- মোহাম্মদ হোসেন জোহার, ফারুক হারেস, মনির আহাম্মদ, নূর ইসলাম, মো. ইয়াছিন। 

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় র‌্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

খন্দকার আল মঈন বলেন, টেকনাফের গহীন পাহাড়ে আরসা সন্ত্রাসীরা গোপন আস্তানা তৈরি করে টর্চার সেল গড়ে তুলেছিল। সেখানে অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে একটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি শর্টগান, চারটি এলজি, তিনটি রামদা ও গুলিসহ নগদ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। 

তিনি বলেন, আরসার গোপন আস্তানার তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে প্রথমে আরসার শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী, কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের অন্যতম সামরিক কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র ও গুলি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা খুন ও অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। 

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, হাফেজ নুর মোহাম্মদের নেতৃত্বে আরসার ৩০-৩৫ জন সদস্য কুতুপালং ক্যাম্প ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তারা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে দুর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র চোরাচালান করত। নুর মোহাম্মদ তার দলের সদস্যদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের কাছ থেকে খুন, অপহরণ ও গুমের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করত। চাঁদার অর্থ না পেলে অপহরণ করে শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণ না পেলে তারা খুন করে গহীন পাহাড়ে অথবা জঙ্গলে লাশ গুম করতো ফেলতো।

আরসার সামরিক কমান্ডারসহ গ্রেফতার ছয়জনের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র ছবি: যুগান্তর

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, হাফেজ নুর মোহাম্মদ ২০১৬ সালে আরিফ উদ্দিনের মাধ্যমে আরসায় যোগ দেয়। নুর মোহাম্মদ কুংফু ও বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী। হেড মাঝি শফি উল্লাহ্, সালাম, সলিম, মালেক, হাবুইয়া, ইমান, আবুল মুনসুর, সালেহ্ ও এক নারীসহ সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত ছয় হত্যাসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে তার নেতৃস্থানীয় ভূমিকার তথ্য মিলেছে। 

অন্য সদস্যদের মধ্যে হোসেন জোহার হেডমাঝি আবু তালেবকে গুলি করে মেরেছে। সাব-মাঝি সৈয়দ হোছেনকে গুলি করে চোখ উপড়ে ফেলে হত্যা এবং শফিকুর রহমানকে গুলি করে হত্যার প্রধান সহযোগী হিসেবে জড়িত ছিল নুর মোহাম্মদ। ফারুক হারেস আরসার প্রহরী দলের প্রধান সমন্বয়কারী এবং টর্চার সেলের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করত। তার ৭-৮ জনের একটি ‘নেটওয়ার্ক গ্রুপ’ রয়েছে, যারা নিয়মিত ক্যাম্পে প্রহরীর দায়িত্ব পালন করত। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে প্রতিবেদন দিত। মনির আহাম্মদ, নূর ইসলাম এবং ইয়াছিন পাহাড়ে অবস্থিত গোপন আরসা ঘাঁটির প্রহরীর দায়িত্ব পালন করত। যেখানে অপহরণ করে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় করা হতো। 

র‌্যাব জানায়, ক্যাম্পে আরসার সাড়ে চারশ সন্ত্রাসী সক্রিয় রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম