টাকা দিলেই চলবে অবৈধ ড্রেজার, ইউএনও’র নামে চাঁদাবাজির ভিডিও ভাইরাল!
যুগান্তর প্রতিবেদন, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০ পিএম
ইউএনও আবিদা সুলতানা ও সহকারী প্রোগ্রামার রনজিত মন্ডল
'আপনারা টাকা দিলে ড্রেজার চলবে আর টাকা না দিলে ড্রেজার চলবে না।'
সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নামে নিয়মিত চাঁদা বাণিজ্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার রনজিত মন্ডলের অপকর্ম জনসম্মুখে ফাঁস হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার দুর্নীতির বরপুত্র উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার রনজিত মন্ডল প্রায় ছয় বছর ধরে একই স্টেশনে চাকরির সুবাদে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আস্থাভাজন হন।
যোগদানের পর থেকে তার আমলে যে কয়জন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দৌলতপুরে এসেছেন; ওই সকল কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভিন্ন অবৈধ খাত থেকে মাসিক চাঁদা উঠানোর দায়িত্ব পেতেন রনজিত। তিনি সিদ্ধ হাতে টাকা তুলে দিতেন নির্বাহী অফিসারকে, আর সেখান থেকে একটা কমিশন পেতেন।তিনি।
ওই সহকারী প্রোগ্রামার অবশ্য স্বীকার করেছেন, ইউএনও অনেক ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে থাকতেন। তার অফিসে কাজের চাপ কম থাকায় ইউএনও, পিআইও, কৃষি অফিসারের সঙ্গে তার সখ্য বেশি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে শোনা যায়, উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার রনজিত মন্ডলের মাধ্যমে ইউএনও আবিদা সুলতানা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অবৈধ ড্রেজার পরিচালনায় সহযোগিতা করতেন। গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ঘুরতে দেখা যায়।
ভিডিওতে উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার রনজিত মন্ডল এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহামুদুল হাসান সুমনের কথোপকথন শোনা গেছে।
দুজনের কথোপকথনের ওই ভিডিওতে রনজিৎ মন্ডলকে বলতে শোনা গেছে, ইউএনও স্যার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, আপনারা টাকা দিলে ড্রেজার চলবে, টাকা না দিলে ড্রেজার চলবে না। স্থানীয় সাংবাদিকরা কন্টিনিউ নক করে স্যারকে। যারা টাকা দেন তাদের ব্যাপারে স্যারকে হোয়াটসঅ্যাপে লিস্ট পাঠানো হয়। এলাকায় মোবাইল কোর্টে গেলে যারা টাকা জমা দেন তাদের ড্রেজার ভাঙা হয় না, এবং যারা টাকা দেন না তাদের অবৈধ ড্রেজার ভেঙে দেওয়া হয়। আপনারা ড্রেজার চালালে আপনাদেরই লাভ!
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলায় অবৈধ ড্রেজার, হাইড্রোলিক ট্রাক্টর, ভেকু (এসকিউবেটর) এবং নদীতে বাল্ক হেড বসিয়ে মাটিকাটাসহ সকল অবৈধ কাজের মূল হোতা হিসেবে সহযোগিতা করেন উপজেলা প্রশাসনের সহকারী প্রোগ্রামার (এপি- এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামার) রণজিত মন্ডল। তিনি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে যোগদানের পর থেকেই এই অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ব্যাপারে সহকারী প্রোগ্রামার রনজিত মন্ডলের সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিকরা কথা বললে তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ে তার বন্ধুকে দিয়ে সাংবাদিকতা বাতিল করে দেয়ার হুমকি দেন।
তবে যুগান্তরের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে তিনি দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ পুরো সত্য নয়। তবে তার সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের যথেষ্ট সখ্য ছিল। এ কারণে ইউএনওর অনেক ব্যক্তিগত কাজ তিনি করতেন।
তিনি জানান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির ড্রেজার ভেঙে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সেখানে তিনিও ছিলেন। এর পর থেকে তিনি ওই ভিডিওটি বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছেন। তবে ভিডিওটি এডিট করা হয়েছে বলে তার দাবি।
সদ্য বিদায়ী দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানার সঙ্গে এ ব্যাপারে তার অফিসিয়াল মোবাইলে একাধিকবার কল ও মেসেজ পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে বর্তমান দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অর্ণব মালাকার যুগান্তরকে জানিয়েছেন, তিনিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখেছেন। তবে ভিডিওটিতে কোথায়ও ইউএনওকে জড়িয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, যে কর্মকর্তার নামে এ ধরনের অভিযোগ তার ঊর্ধ্বতন অফিসাররা ব্যবস্থা নিবেন। এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে আমি রাজি না।