স্কুলে তিন পদে নিয়োগে সাড়ে ৩৪ লাখ টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৩, ০৬:১৩ পিএম
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার হুজরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনটি পদের নিয়োগে সম্প্রতি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও শিক্ষক প্রতিনিধি দেননি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোজাহার আলী।
এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কবিরুল ইসলাম, সাহেরা খাতুন, নাসিমা খাতুন, এনামুল হক, আজিজুল ইসলাম, আবু তালেব, হাবিবুর রহমান, সৈয়দ মাহবুবুল আলম, শহিদুল ইসলাম, সুনীল সরেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির তিনটি পদ শূন্য ছিল। এজন্য বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান ও শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ নিয়োগ দিতে সম্প্রতি তৎপরতা শুরু করেন। আবুল কালাম আজাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। আর মতিউর রহমান এই বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক এবং রিশিকুল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তারা নিয়োগ বাণিজ্য করে নিরাপত্তাকর্মী পদে বাউটিয়া গ্রামের জাহিদ আলী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে হুজরাপুর গ্রামের সেলিম রেজা এবং আয়া পদে পাইতাপুকুর গ্রামের আন্না মারান্ডীকে নিয়োগ দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া পদে সভাপতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে ৪১ জন প্রার্থী আবেদন করেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই সভাপতি ও শিক্ষক প্রতিনিধি তিনজন প্রার্থীর নাম জানিয়ে বলেন, পদগুলোতে এই তিনজনকে নিয়োগ দিতে হবে। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি জানতে পারলে নিয়োগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল আলম তাকে ডেকে পাঠান।
প্রধান শিক্ষক গেলে তাকে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে নিয়োগটা সম্পন্ন করে ফেলেন। আমি এমপির নির্দেশনায় কাজ করছি। নিয়োগ না দিলে আপনারই চাকরির সমস্যা হবে। এতে ভয় পেয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে সম্মত হন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান শিক্ষক বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার আগেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তিনজন প্রার্থীর নাম জানিয়ে দেন। এজন্য গত ২২ জুন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় তাদের অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হয়। এরপর ম্যানেজিং কমিটির সভা ছাড়াই সভাপতি গত ৩ জুলাই নিয়োগপত্র ইস্যু করেন এবং ৯ জুলাই যোগদান দেখিয়ে তিনজনকে বিদ্যালয়ে আসতে বলেন। তবে অনিয়মের কারণে আমি যোগদান করাইনি।
মোজাহার আলী বলেন, স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম ভাঙিয়ে সভাপতি মতিউর রহমান ও শিক্ষক প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ তিন প্রার্থীর কাছ থেকে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা থেকে চার লাখ বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা দেননি। এর প্রতিবাদ করার কারণে শিক্ষক প্রতিনিধি ও সভাপতি আমাদের চাকরিচ্যুতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজনকে যোগদান না করানোর কারণে এক সপ্তাহ আমাদের বেতনও বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া তিনজনকে এখনও যোগদান করানো হয়নি বলে সভাপতি ও শিক্ষক প্রতিনিধি এখন আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। আমরা এ নিয়োগ বাতিল চাই।
প্রধান শিক্ষক বলেন, আমরা সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের কাছে তটস্থ থাকি। দলীয় প্রভাব দেখিয়ে তিনি আমাদের তটস্থ করে রাখেন। এই শিক্ষক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান মেলার ৩০ হাজার টাকা অনুদানও আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ তুলেছে, তার সবই মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মতিউর রহমানও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, নিয়ম মেনে সঠিকভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দিতে চাপ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল আলমকে ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।