আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুদল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৩, ০৬:০১ পিএম

এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর দুর্গম চরাঞ্চল আলোকবালীতে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে সদর উপজেলার মেঘনা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের খোদাদিলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শর্টগানসহ নাজমুল ইসলাম (২০) ও আল আমিনকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে এলাকার নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে ৫ লাখ টাকার চুক্তিতে পার্শ্ববর্তী নিলক্ষা এলাকা থেকে অস্ত্রসহ ৩ জন সন্ত্রাসীকে ভাড়া করে আনা হয়। পরে গ্রামবাসীর হাতে আটক হওয়ার পর অস্ত্রধারী নাজমুল এ কথা স্বীকার করেছেন। গ্রেফতারকৃত অস্ত্রধারীর এই বক্তব্য ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ফলে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধরা হলেন- আল আমিন (৩০), নাহিদ সরকার (২২), সাকিব সরকার (২৪), শফিউল্লাহ (৩৫)। টেঁটাবিদ্ধসহ আহতরা হলেন- হালিম মিয়া (৫০), হারুন মিয়া (২০), মাসুদ রানা (২৪), নাজমুল ইসলামসহ (২০) অজ্ঞাতনামা আরও ২ জন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ আলামিনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। তারা সবাই আলোকবালীর খোদাদিলা গ্রামের বাসিন্দা। অন্য আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলার মেঘনা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বজলুর রহমান ফাহিম ও যুবলীগের নেতা জাকির হোসেনের সঙ্গে একই ইউনিয়নের ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। দ্বন্দ্বের জের ধরে উভয় গ্রুপের মধ্যে মামলা-পালটা মামলা হয়েছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন এলাকাছাড়া হয়ে পড়েন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ভোর রাতে জাকির হোসেন ও ফাহিমের সমর্থকরা বাঁশগাড়ী ও নীলক্ষার থেকে লোকজন নিয়ে এলাকায় ঢোকেন। এ খবর জয়নাল আবেদিন গ্রুপের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা তাদের প্রতিহত করে। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
এ সময় প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে আলামিনসহ চারজন গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের কমবেশি ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে গুলিবিদ্ধ ও আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করে। এদিকে খবর পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শর্টগানসহ গ্রামবাসীর হাতে আটক নিলক্ষা গ্রামের নাজমুল ইসলাম বলেন, ৫ লাখ টাকা চুক্তিতে আমরা অস্ত্রসহ তিনজন নিলক্ষা গ্রাম থেকে এখানে এসেছি। জাকিরের দলকে জিতিয়ে দিব এবং যাকে পাবে তাকেই মারব।
এক পক্ষের নেতা জয়নাল আবেদিন বলেন, মামলায় আসামি হয়ে জাকির এলাকা ছাড়া। হঠাৎ ফজরের নামজের পর পর জাকির ও ফাহিমের নেতৃত্বে বাঁশগাড়ী ও নীলক্ষার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে এলাকায় ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করেন। পরে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে ঘেরাও দিয়ে অস্ত্রসহ নাজমুল নামে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে অপর পক্ষের নেতা জাকির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বুধবার আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ছিল। সেখানে আমাদের লোকজন যাওয়ায় জয়নাল ও তার ভাইয়েরা আমাদের লোকজনকে মারধর করে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে জয়নাল লোকজন নিয়ে আমার ও আমার সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালায়।
৫ লাখ টাকায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ভাড়া আনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ। এসব সঠিক নয়।
নরসিংদী সদর থানার এসআই অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। শর্টগানসহ ২ জনকে আটক করা হয়েছে। এখন এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।