নুহাশপল্লীতে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় হুমায়ূনকে স্মরণ
জয়দেবপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৩, ০৬:৩৫ পিএম
একাদশতম মৃত্যুবার্ষিকীতে নুহাশপল্লীতে পরিবারের স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করলেন। বুধবার সকালে লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই পুত্র নিনিত ও নিষাদের উপস্থিতিতে কবর জিয়ারত করা হয়।
এ সময় হুমায়ূন আহমেদের শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। লেখকের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। আয়োজন করা হয় কুরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল।
করব জিয়ারতের পর হুমায়ূন আহমদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের বলেন, হুমায়ুন আহমদ চলে গেছেন ১১ বছর। এখনো হুমায়ুন আহমেদের নাটক যদি ইউটিউব বা চ্যানেলে চলে আমরা শেষ না করে উঠতে পারি না। তবে খুবই দুঃখজনক হলেও সত্য হুমায়ুন আহমদের বহু নাটক, সিনেমা বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও ইউটিউব চ্যানেলে কোনো রকম চুক্তিপত্র ছাড়াই তার সৃষ্টিকর্ম চালানো হচ্ছে। হুমায়ুন আহমদ বেঁচে থাকতেও নেয়নি, মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকার কারও সঙ্গে চুক্তি বা মৌখিক অনুমতি নেয়নি। দেশের এসব প্রথমসারির ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি, উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি কিন্তু তারা এটি গ্রহণ করেননি এবং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
তিনি আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদ যখন মারা যান তখন আমার বড় ছেলের বয়স সাড়ে পাঁচ বছর এবং ছোট ছেলের বয়স দেড় বছর ছিল। তখন ওরা বাবার অভাব ও প্রয়োজন তেমন বুঝতেন না। তবে এখন ওরা বড় হয়েছে। বড় ছেলে এখন বুঝে একজন মানুষ হুমায়ুন আহমেদ নামটির কি ভার। মাঝেমধ্যে ও মন খারাপ করে বসে থাকে। ও বলে যদি বাবাকে পেতাম তাহলে অনেক গল্প করতাম, অনেক কিছু শিখতাম। এ জায়গাটায় আমি থমকে যাই।
হিমু পরিবহণের হেলপার প্রিতম বলেন, বাংলাদেশের সবাইকে ক্যান্সার বিষয়ে সচেতন করা তাদের উদ্দেশ্য। এছাড়াও বইপড়া ও বৃক্ষরোপণ করা হয়ে থাকে। তবে আমাদের মূল কাজটি হয়ে থাকে লিফলেট বিতরণ করে ক্যান্সার বিষয়ে সচেতন সৃষ্টি করা।
হিমু পরিবহণের হেলপার নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ভৈরব থেকে সকালে ঢাকা জাদুঘরের সামনে আসি। এরপর সেখান হতে ৫১ জন হেলপার নিয়ে নুহাশপল্লীতে আসি। আমরা হুমায়ূন স্যারকে হৃদয়ে লালন করি, স্মৃতিচারণ করি। আমরা হিমু পরিবহণের প্রতিটি হেলপার হুমায়ুন স্যারের পরম ভক্ত।
হুমায়ূনভক্ত লামিয়া আক্তার বলেন, প্রতি বছর হুমায়ূন স্যারের জন্মদিন ও মৃত্যুবার্ষিকীতে নুহাশপল্লীতে আসি। স্যারের প্রতিটি বই আমি পড়েছি এবং একাধিকবার। স্যার শিখিয়েছেন কিভাবে কল্পনায় স্বর্গীয় সুখ অনুভব করা যায়।
রাজশাহী পুঠিয়া এলাকার স্কুলশিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, হুমায়ূন স্যারের মৃত্যু পর থেকে প্রতিটি জন্মদিন ও মৃত্যুবার্ষিকীতে এখানে আসি। আমি বাংলা শিক্ষক আর স্যারকে আমি অন্তরে লালন করি। আমার কষ্টের বিষয় স্যারকে কখনো সামনাসামনি দেখিনি। স্যার যখন মারা যান তখন নুহাশপল্লী চিনতাম না, এজন্য কবর দিতে আসতে পারিনি।
প্রতি বছরের মতো এবারও নুহাশপল্লীতে মিলাদ ও কুরআন খতমের আয়োজন করা হয়। পরে দুই শতাধিক এতিমদের দুপুরে ভালো খাবার খাওয়ানো হয়।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তার বাবা ফয়েজুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজ। ২০১২ সালে ১৯ জুলাই মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান। পরে তাকে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালীতে তার স্বপ্নের নুহাশপল্লীর লিচুতলায় দাফন করা হয়।