সজিব হত্যাকাণ্ড ‘অরাজনৈতিক’ বললেন এসপি, বিএনপির দাবি ছাত্রলীগ জড়িত
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৩, ০৫:৫১ পিএম
লক্ষ্মীপুরে কৃষক দল নেতা সজিব হোসেন হত্যাকাণ্ড ‘অরাজনৈতিক’। পুলিশ বা কারো গুলিতে নয়, ধারালো অস্ত্র বা ছোরার আঘাতে সজিবের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ।
তবে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও নিহত সজিবের দাদা মো. হানিফ মিয়া বলছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সজিবকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে এসপি নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এবং দুপুর ১টার দিকে এ্যানি চৌধুরীর গোডাউন রোড এলাকার বাসভবন প্রাঙ্গণে গায়েবানা জানাজায় বিএনপি নেতারা এ পালটাপালটি বক্তব্য দেন।
সজিবের মরদেহ নিয়েই জানাজা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ তা করতে দেয়নি। সজিবের মরদেহ পুলিশ সদরের চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ধন্যপুর গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েছেন।
এদিকে মঙ্গলবার বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ এবং সজিব হত্যাকাণ্ডে লক্ষ্মীপুর শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বুধবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরে র্যাব-১১ এর চারটি গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে।
এসপি মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, লাশ উদ্ধারের স্থান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সজিব আহত অবস্থায় ফিরোজা ভবন নামে একটি বাসায় ঢুকে পড়ে। মৃত্যুর আগে সেখানকার এক ব্যক্তির সঙ্গে সজিবের কথা হয়েছে। সজিব ওই ব্যক্তিকে বলেছেন, তিনি বিএনপির প্রোগ্রামে আসেননি। ৪-৫ জন লোক তাকে কুপিয়েছে। তার কাছে তারা টাকা পায়। তিনি বিয়েও করেছেন। এরপর সজিব আর কোনো কথা বলতে পারেননি। ঘটনাস্থলে থাকা ব্যক্তিরা ৯৯৯ নম্বরে কল করে সজিবের চিকিৎসার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন। কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স চালককেও কল করেছেন কিন্তু বিএনপির সঙ্গে হামলার ঘটনার কারণে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা যেতে পারেননি। পুলিশ যাওয়ার আগেই প্রচুর রক্তক্ষরণে সজিব মারা যান।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির হামলায় আমাদের ২৫-৩০ জন পুলিশ আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতাল ও দোকানঘর ভাঙচুর করেছে। তারা কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা ও কত রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ারশেল, গুলি ছোড়া হয়েছে তাও জানাননি তিনি।
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির লক্ষ্মীপুরের গোডাউন রোড এলাকার বাসভবন প্রাঙ্গণে সজিবের আত্মার মাগফিরাত কামনায় গায়েবানা জানাজা ও দোয়া হয়েছে। এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু, যুগ্ম আহবায়ক হাছিবুর রহমান, জেলা কৃষক দলের সভাপতি মাহবুব আলম মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
নিহত সজিবের দাদা মো. হানিফ মিয়া চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য। তিনি বলেন, সজিব আমার সঙ্গে বিএনপির প্রোগ্রামে এসেছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
জানাজার শুরুতে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সজিবকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এর নেতৃত্বে ছিল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এসপি এখন বলছেন, সজিব হত্যাকাণ্ড অরাজনৈতিক। এতে বুঝা যাচ্ছে, কতিপয় পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী ছাত্রলীগকে সহযোগিতা করেছে। এ খুনের সঙ্গে জড়িত সবার তথ্য আমরা সংগ্রহ করছি। এ ঘটনায় মামলা হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এসপি সাহেব লক্ষ্মীপুরকে আর রক্তাক্ত করবেন না। বিএনপি নেতাকর্মীরা আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা জেগে ওঠেছি। শেখ হাসিনার সরকার পতনে রাস্তায় নেমেছি। আমাদের ২০০ থেকে ২৫০ জন নেতাকর্মী আহত। এরমধ্যে ৪-৫ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে সারা দেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও একইভাবে কর্মসূচি পালন করা হবে।
প্রসঙ্গত, বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার পর লক্ষ্মীপুরে কৃষক দল নেতা সজিব হত্যার ঘটে। সজিব সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধন্যপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানা কৃষক দলের সদস্য।