Logo
Logo
×

সারাদেশ

জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার

Icon

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৩, ০৫:৫৯ পিএম

জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার

অভিনব জালিয়াতির মাধ্যমে একটি চক্র দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের রেমিট্যান্স শাখা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল। সম্প্রতি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক হাসনাবাদ শাখা থেকে প্রায় ছয় লাখ টাকা এভাবে খোয়া যাওয়ার পর ব্যাংকের অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা জেলা পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামে।

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও নানা পন্থা অবলম্বন করে চক্রটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। গাজীপুর, ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়া (ডিএমপি) ও কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে জালিয়াত চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীনুল ইসলাম (ক্রাইম অ্যান্ড অপস-দক্ষিণ), কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজামান জানান, প্রবাসীরা দেশে কারো কাছে টাকা পাঠালে তার একটা কোড নম্বর থাকে। ব্যাংকে গিয়ে যে মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছে (যেমন মানিগ্রাম, রিয়া) সেই মাধ্যমের নাম ও কোড নম্বর সংশ্লিষ্ট অফিসারকে বললে তিনি সেগুলো ভেরিফাই করে একটা রেমিট্যান্স স্লিপে সিল ও স্বাক্ষর করে গ্রাহককে ফেরত দেন। গ্রাহক সেই স্লিপ নিয়ে ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে জমা দেন। ক্যাশ কাউন্টারে থাকা অফিসার রেমিট্যান্স স্লিপ যাচাই করে উল্লেখিত টাকা গ্রাহককে প্রদান করেন।

তিনি বলেন, প্রতারকরা দুই অফিসারের মাঝের সময়টাতে সুযোগটা নিয়েছে। প্রথম অফিসার যে রেমিট্যান্স স্লিপ তৈরি করে গ্রাহককে দেন প্রতারকরা সেই স্লিপ হুবহু তৈরি করে সরাসরি ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যেত। অর্থাৎ এরা আগে থেকে ওই অফিসারের (প্রথম অফিসার, যাকে রেমিট্যান্স অফিসার বলা হয়) সিল ও স্বাক্ষর সংগ্রহ করে হুবহু তারা তৈরি করে নিত। টাকা উত্তোলনের সময় ওই দিনের তারিখ ও রেমিট্যান্স অফিসারের সিল স্বাক্ষর দিয়ে নিতেন। নকল রেমিট্যান্স স্লিপ হলেও দ্বিতীয় অফিসার প্রথম অফিসারের সিল স্বাক্ষর ভেরিফাই করে টাকা দিয়ে দিতেন। এভাবে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১টি ব্যাংকের রেমিট্যান্স শাখা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত ৩ মে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের হাসনাবাদ শাখায় সংঘটিত ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে আমরা চক্রটির সন্ধান পাই।

ওই দিন চক্রটির ৭-৮ সদস্য পাঁচটি নকল রেমিট্যান্স স্লিপ তৈরি করে দুই ক্যাশ কাউন্টার থেকে পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮০ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১২ জুন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বহেরাতলা গ্রামের রুস্তম শেখের ছেলে রিপন মিয়া ওরফে হোন্ডা রিপন (৩৮), মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কামারকান্দি গ্রামের আলামিয়া মুন্সীর ছেলে মীর হাজারীবাগ বিল্লালের বাড়ির ভাড়াটিয়া রহিম মুন্সি (২৮), মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চর সম্ভরক গ্রামের মালেক মোড়লের ছেলে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার রসুলপুর এলাকার ভাড়াটিয়া মো. জুয়েল (৩১), বরিশালের হিজলা থানার চরদুর্গাপুর গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী কেরানীগঞ্জের জনিটাওয়ার, আওলাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া কুলসুম বেগম (৪০) ও গাজীপুর মেট্রোপলিটনের টঙ্গী পূর্ব থানার মরকুন এলাকার মৃত আ. আউয়ালের ছেলে আসাদুজ্জামান স্বপন (৫৫)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে আটটি নকল রেমিট্যান্স স্লিপ ও সাতটি এনআইডির ফটোকপি জব্দ করা হয়েছে।

কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির জানান, এই দলে ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। দলের কয়েকজন সদস্যের কাজ হলো অপেক্ষাকৃত ব্যস্ত ও দুর্বল নিরাপত্তা সম্বলিত ব্যাংকের শাখা খুঁজে বের করা। কোনো ব্যাংকের শাখা টার্গেট করার পূর্বে তারা ব্যাংকটি কয়েকবার রেকি করে। তারপর ওই ব্যাংকের রেমিট্যান্স অফিসারের সিল ও স্বাক্ষর এর নমুনা সংগ্রহ করে। এরপর আরেকটি গ্রুপ উক্ত স্বাক্ষর জাল করে নকল রেমিট্যান্স পেমেন্ট স্লিপ তৈরি করে। এরপর অন্য সদস্যরা নকল স্লিপ নিয়ে টার্গেট করা ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে রেমিট্যান্সের টাকা প্রতারণামূলকভাবে উত্তোলন করে।

তিনি জানান, তদন্তে সংঘবদ্ধ এই প্রতারক চক্রের দ্বারা দেশের বিভিন্ন স্থানের এ পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকে অনুরূপ অর্থ জালিয়াতির ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রটির পলাতক সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম