দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডারের সঙ্গে ক্রিকেটার পাইলটের ছবি ভাইরাল

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৩, ০৯:১৫ পিএম

রাজশাহীর এক সময়ের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার এবং বহু নাশকতার কারিগর আশরাফুল ইসলাম ইমনের সঙ্গে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। ছবিটি ঠিক কবেকার তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে না পারলেও বৃহস্পতিবার রাতে আলোচিত ছবিটি সাংবাদিকদের হাতে আসে। ধারণা করা হচ্ছে গত ঈদের একদিন অথবা এক-দুদিন পরের ছবি এটি।
আশরাফুল ইসলাম ইমন ছাত্র শিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এবং পরে রাজশাহী মহানগর শিবিরের সভাপতি ছিলেন। বাড়ি মহানগরীর সাগরপাড়া এলাকায়। ক্রিকেটার পাইলটের বাড়িও একই এলাকায়। এই শিবির নেতা বর্তমানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নেতা এবং জামায়াতে ইসলামীর শূরা সদস্য। জামায়াতে ইসলামীর মিডিয়া শাখার পরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছেন। ইমনের বিরুদ্ধে রাবি ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হত্যা, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে হামলা, ইট দিয়ে পুলিশের মাথা থেঁতলে দেওয়া, রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিনের ওপর নৃশংস হামলার পর পায়ের রগ কেটে দেওয়া, রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি তাকিমের রগ কেটে দেওয়া এবং আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে বাস পোড়ানোসহ অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মোট ৪২টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে ২২টি চলমান আছে।
২০১০ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি রাতে ইমনের নেতৃত্বে রাবির চারটি হলে নৃশংস হামলা চালায় শিবির ক্যাডাররা। ওই রাতে রাবির এসএম হলে আশ্রয় নেওয়া ছাত্রলীগ নেতা ফারুককে নসৃংশভাবে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ হলের বাইরের ম্যানহোলে ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ প্রতিরোধে এগিয়ে গেলে শিবির ক্যাডাররা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তিন ঘণ্টা ধরে চলে বন্দুকযুদ্ধ। শিবির ক্যাডার ইমন ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। ফারুকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে দেশব্যাপী তোলপাড় হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজশাহী থেকেই শিবির উৎখাতের অভিযান শুরু করে। তবে পুলিশের একটি অংশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলায় ইমনকে পুলিশ কখনো গ্রেফতার করেনি।
এদিকে বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে দেখা যায় খালেদ মাসুদ পাইলট মাঝখানে বসে আছেন। ইমন তার বাম পাশে এবং ডান পাশে বসে রয়েছেন আরেক সাবেক শিবির নেতা। তবে তার নাম জানা যায়নি। ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলটের বাড়ি রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া এলাকায়। ঈদের পর কোনো একদিন সাগরপাড়া এলাকায় পাইলট ও ইমনের সাক্ষাৎ হয় এবং তারা একসঙ্গে ছবিটি তুলেছেন। অন্যদিকে ইমন একই এলাকার বাসিন্দা হলেও জামায়াতের শূরা সদস্যের সুবাদে ঢাকায় অবস্থান করেন। ঈদের সময় বাড়িতে এসেছিলেন। শিবিরের এই ক্যাডারের সঙ্গে রাজশাহীতে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার যোগাযোগের বিষয়টিও আলোচনায় আছে।
এত মামলার আসামির সঙ্গে স্বনামখ্যাত একজন ক্রিকেটার কীভাবে ছবি তুললেন তা নিয়ে রাজশাহীতে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। আরএমপির বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট ও জামায়াত নেতা আশরাফুল আলম ইমনের ছবি গণমাধ্যমে আসার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খোঁজখবর নিচ্ছে। আসলে সেটি কোনো বৈঠক ছিল নাকি নিছকই সৌজন্য সাক্ষাৎ সে বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে সাবেক শিবির নেতা আশরাফুল আলম ইমন বলেন, ‘পাইলট ভাইয়ের বাড়ির পাশে আমাদের বাড়ি। আমি ঈদের পর তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সে সময় তার সঙ্গে আমার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। সেটি কোনো নির্ধারিত বৈঠক ছিল না। এটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার কিছু নেই।’
ইমন দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে থাকা ৪২টি মামলার সব রাজনৈতিক। এর মধ্যে ২৫টি মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন। বাকি মামলায় জামিনে আছেন। সেগুলোতেও খালাস পাবেন।
এদিকে দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডারের সঙ্গে ছবির বিষয়ে মুখ খুলেছেন খালেদ মাসুদ পাইলট। শুক্রবার বিকালে তিনি বলেন, ইমনের বাড়ি আমাদের মহল্লায়। ঈদের পর সে দেখা করতে আসে আমাদের বাসায়। এ সময় একটা তোলা হয়। কেউ হয়তো বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়েছেন। এটা কোনো বৈঠক ছিল না। এটা নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই।