ওসির কাছে বিচার চাইতে গিয়ে বাদী শ্রীঘরে!
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৩, ১০:২১ পিএম
পটুয়াখালীর বাউফল থানার ওসির কাছে বিচার চাইতে এসে ১৫ ঘণ্টা হাজতে কাটালেন বাবা, তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে, শ্যালক ও অভিযুক্ত এক ব্যক্তি। পরে তাদের মামলার আসামি করে কোর্টহাজতে প্রেরণ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ছেলেকে মারধর করার বিচার চাইতে উপজেলার কাছিপাড়া ইউনিয়নের পাকডাল গ্রামের পারভেজ মিয়া (৩৮) তার ছেলে কর্ণর মিয়া (১২) ও শ্যালক রাকিবকে (২৫) নিয়ে সোমবার রাত ৮টায় বাউফল থানার ওসি আরিচুল হকের কাছে আসেন। তিনি প্রতিপক্ষ আব্বাস হাওলাদার ও তার ছেলে অপুর বিরুদ্ধে বিচার চাইতে যান।
ওই সময় তার স্ত্রী সীমা বেগম (২৭) সঙ্গে ছিলেন। এ খবর পেয়ে প্রতিপক্ষ আব্বাস হাওলাদার থানায় আসেন। এরপর ওসি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া কর্ণর, তার বাবা পারভেজ, মামা রাকিব ও অভিযুক্ত আব্বাস হাওলাদারকে ওসির অফিস কক্ষের সামনে একটি কক্ষে ঢুকিয়ে রেখে বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দেন।
রাত ৮টার দিকে তাদের ওই কক্ষের মধ্যে ঢুকানো হয় এবং রাত সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকজন পুলিশ শিশু কর্ণরকে চিকিৎসার জন্য মোটরসাইকেলযোগে গোরস্থান রোড এলাকায় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে শিশুটিকে চিকিৎসা শেষে থানায় নেওয়া হয়। পরে শিশুটিকে তার মায়ের জিম্মায় ছেড়ে দিলেও অন্যদের ওই রুমের মধ্যে আটকে রাখা হয়। এরপর সেখান থেকে তাদের থানা হাজতে নিয়ে রাখা হয়।
এরপর ওই তিনজনকে আসামি করে গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় পটুয়াখালী আদালতে পাঠানো হয়। বাউফল থানার এসআই বাদল কৃষ্ণ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
পটুয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক মো. জামাল হোসেন ওই দিন দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। বিকাল ৪টায় আসামিরা কোর্টহাজত থেকে জামিনে ছাড়া পান।
আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সোমবার বিকাল ৫টার দিকে বাউফলের কাছিপাড়া শহীদ জালাল সরকারি প্রাইমারি স্কুল মাঠে ফুটবল খেলা নিয়ে আব্বাস হাওলাদার ও পারভেজ হাওলাদারের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। এ মামলায় আব্বাস হাওলাদার, রাকিব হাওলাদার ও পারভেজ মিয়াকে আসামি করা হয়। ফুটবল খেলায় পারভেজ মিয়ার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে কর্ণরকেও মারধর করা হয়। আসামিদের বক্তব্য সত্য হলে তাদের পুলিশের হয়রানি করা ঠিক হয়নি।
পারভেজ মিয়ার স্ত্রী সীমা বেগম অভিযোগ করেন, তার স্বামী ও ছেলেকে মারধর করার অভিযোগ জানাতে ওসির কাছে আসেন। তিনি অভিযোগ না নিয়ে উল্টো তার স্বামী, ছেলে ও এক ভাইকে এবং প্রতিপক্ষ আব্বাস হাওলাদারকে আটকে রাখেন। ওসি আমাদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে ইচ্ছা করে আমার স্বামী, সন্তান ও ভাইকে আটকে রাখেন। পরে শুনলাম পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। আর সেই মামলায় তাদের কোর্টে চালান করা হয়েছে। আমি ওসির নির্দয় আচরণের বিচার চাই।
বাউফল থানার ওসি আরিচুল হক বলেন, ফুটবল খেলায় মারামারি হচ্ছে এ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আব্বাস হাওলাদার, রাকিব হাওলাদার, পারভেজ মিয়া ও তার ছেলে কর্ণরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এর মধ্যে শিশু কর্ণরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।