নিজ হাতে শিশু আরিফাকে হত্যার কারণ জানালেন বাবা
দাগনভুঞা (ফেনী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৩, ০৯:১৫ পিএম
শিশু জান্নাতুল আরিফা আক্তার হত্যার রহস্য উন্মোচিত করেছে পুলিশ। ফেনীর দাগনভুঞায় ভরণপোষণের দায় থেকে মুক্তি ও উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতেই শিশু জান্নাতুল আরিফা আক্তারকে (১০) হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয় ঘাতক বাবা টিপু মিয়া।
গ্রেফতারের পর মেয়েকে হত্যার কারণ উল্লেখ করে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেন তিনি।
রোববার সকালে সংবাদ সম্মেলনে সহকারী পুলিশ সুপার তাসলিম হুসাইন (সোনাগাজী সার্কেল) ও দাগনভুঞা থানার ওসি মো. হাসান ইমাম সাংবাদিকদের বিষয়টি অবহিত করেন।
পুলিশ জানায়, ৯ বছর আগে উপজেলার মধ্যম জয়নারায়ণপুর গ্রামের পদুয়া বাড়ির কবির আহমেদের ছেলে অটোরিকশাচালক টিপু মিয়ার সঙ্গে উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামের করিম মেম্বার বাড়ির আলী আহমদের মেয়ে রোমানা আক্তারের ডিভোর্স হয়। ওই সময় ছয় মাস বয়সের আরিফা মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে থাকত। তার বয়স এখন ১০ বছর, সে স্থানীয় সিন্দুরপুর অদুদীয়া নুরানি মাদ্রাসায় ৩য় শ্রেণিতে পড়ত।
মায়ের ডিভোর্সের পর আদালতে মামলা চলে আসছিল। একপর্যায়ে আদালত ছয় শতক সম্পত্তি নিহতের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং প্রতি মাসে মেয়ে আরিফার ভরণপোষণের জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
এরপর গত ১৭ জুন নানার বাড়ি থেকে বেড়ানোর কথা বলে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন ঘাতক বাবা টিপু মিয়া। ২১ জুন দুপুরে বসতঘর থেকে ২০ গজ দক্ষিণে মুখে গামছা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেন তিনি। পরে মেয়ের খোঁজে এলাকায় মাইকিং করেন। পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে নিহতের নানাকে ফোন করে জানান ঘাতক বাবা টিপু।
ওই দিন বাদ মাগরিব শিশু জান্নাতুল আরিফা আক্তারের লাশ পুকুরে ভেসে উঠে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। পরদিন লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে নানার বাড়িতে দাফন করে। নিহত আরিফার মৃত্যুর ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন মা রোমানা।
পরে পুলিশের একাধিক টিম রহস্য উন্মোচনে কাজ করে। মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনের জন্য পুলিশ আরিফার মরদেহ প্রাথমিক সুরতহালে নখের আঁচড় দেখতে পায়। ঘাতক পিতা টিপুর হাতের নখের আঁচড়ের মিল ছিল। শিশু আরিফা বাঁচার জন্য চেষ্টা করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার রাতে টিপুকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী পাইপফিটার মিস্ত্রি আরাফাত বলেন, ঘটনার সময় আমি বাড়ি থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাই। যাওয়ার সময় বাবা-মেয়েকে দেখেছি পুকুরের উত্তর-পশ্চিমপাড়ে। বাড়ি থেকে মা ফোন করে জানান আরিফাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এলাকায় মাইকিং চলছে।
তিনি বলেন, যেখানে বাবা ও মেয়েকে দেখেছেন তার পাশেই লাশ পাওয়া গেছে।
নিহতের নানা আলী আহমদ জানান, নাতনির ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমার মেয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেনি। নিষ্পাপ নাতনিকে হত্যা করবে ঘাতক টিপু- এ কথা ভাবতেও পারিনি। সামনে কুরবানির ঈদ। নাতনিকে বেড়ানোর জন্য অনুরোধ করে ঘাতক টিপু। পরে আমি নাতনিকে পৌঁছে দিয়েছি।
দাগনভুঞা থানার ওসি মো. হাসান ইমাম জানান, ঘাতক টিপুকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা রোমানা আক্তার বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।