বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে নিহত ৭ জন একই পরিবারের
ফরিদপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩, ০৯:২০ পিএম
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লেগে দগ্ধ হয়ে একই পরিবারের সাতজনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গা-ঢাকা হাইওয়ে এক্সপ্রেস সড়কে মালিগ্রাম ফ্লাইওভার ব্রিজের ওপর এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ সময় একমাত্র বেঁচে থাকা দগ্ধ অ্যাম্বুলেন্স চালক মৃদুল মালো (৩৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল ৫টার দিকে মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুর পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সাতজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।
দুর্ঘটনার পর এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পুড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি ক্রেন দিয়ে সেখান থেকে সরানো হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ জানায়, ঢাকা থেকে রোগী ও তাদের স্বজনদের নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গার দিকে যাচ্ছিল। পথে বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মালিগ্রামে পৌঁছলে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে যায়। দগ্ধ ও আহত হয়ে চালক মৃদুল মালো গাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। এরপর মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। চালক বের হতে পারলেও রোগী ও রোগীর স্বজনরা বের হতে না পেরে সাতজনই ঘটনাস্থলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।
নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী, দুজন পুরুষ ও দুজন শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিবচর হাইওয়ে থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম।
নিহতরা হলেন- ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ফেলাননগর গ্রামের প্রবাসী আজিজার রহমানের স্ত্রী তাছলিমা বেগম (৫৫), তার মেয়ে কমলা পারভিন (২৬), বিউটি বেগম (২৪), নাতি হাসিব (৮), হাফসা (২), আরিফ (১২) ও মেহেদি (১২)।
অ্যাম্বুলেন্সের চালক ফরিদপুর শহরের লক্ষ্মীপুর মহল্লার তকি মোল্যা সড়কের সুভাষ মালোর ছেলে মৃদুল মালো (৩৫)। এর মধ্যে কমলা বেগম ঢাকায় বসবাস করতেন। ছোট মেয়ে বিউটি বেগম উপজেলার শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমরা গ্রামের মাহমুদ ইসলাম রনির স্ত্রী।
মাদারীপুর হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মালিগ্রাম ফ্লাইওভার এলাকায় এসে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় অ্যাম্বুলেন্সের সামনে অংশটি ফ্লাইওভারের রেলিংয়ে গিয়ে আঘাত লাগে। এর ফলে অ্যাম্বুলেন্সে বিস্ফোরণ থেকে আগুন ধরে যায়। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে সাতজন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই মারা গেছেন।
শিবচর হাইওয়ে থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ভাঙ্গা থানার ওসি জিয়ারুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, ঘটনাস্থলেই সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি দুর্ঘটনাকবলিত স্থান থেকে সরানো হয়েছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান জানান, অ্যাম্বুলেন্স চালক মৃদুল মালো ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকাল ৫টার দিকে মারা গেছেন।
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) বিপুল চন্দ্র দেকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া নিহতদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।