Logo
Logo
×

সারাদেশ

ঠাকুরগাঁও আদালতে আসামিদের জন্য পাঠাগার!

Icon

এটিএম সামসুজ্জোহা, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩, ০৯:০৩ পিএম

ঠাকুরগাঁও আদালতে আসামিদের জন্য পাঠাগার!

মামলার নির্ধারিত তারিখে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় আসামিদের, বসিয়ে রাখা হয় হাজতখানায়। মামলার শুনানি শুরুর আগপর্যন্ত আদালতের হাজতের মেঝেতে বসে থাকতে হয় তাদের। ওই সময়টুকু হতাশ, দুশ্চিন্তায় আর দুর্ভোগে কাটে আসামিদের।

তাদের এ দুর্ভোগ কমানোর পাশাপাশি সময় কাটানোর জন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মুখ্য বিচারক নিত্যানন্দ সরকার। বন্দিদের মানসিকতার বিকাশ ও জ্ঞানচর্চার জন্যই ‘হাজতি পাঠাগার’ করেছেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিত্যানন্দ সরকার নিজ উদ্যোগে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা ও কয়েকজন দানশীল ব্যক্তির সহযোগিতায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় এ পাঠাগার করেন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ পাঠাগারের কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস রমেশ কুমার ডাকা, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান, জেল সুপারিন্টেনডেন্ট আবু তালেব, কারাগারের জেলার খোন্দকার মো. আল-মামুন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু প্রমুখ।

ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শেখর কুমার রায় বলেন, বিষয়টি প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয়। জেল সুপারিন্টেনডেন্ট আবু তালেব বলেন, বন্দিদের সংশোধনের জন্য এটি একটি মাইলফলক।

পাঠাগারে প্রাথমিকভাবে স্থান পেয়েছে চারশর অধিক বই। এর মধ্যে রয়েছে- শরৎ রচনাসমগ্র, ডেল কার্নেগির রচনাসমগ্র, জেল কোড, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরসহ বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী লেখকদের রচিত বইসহ খ্যাতনামা মনীষীদের জীবন আলোকে রচিত রচনাসমগ্র, সাক্ষ্যআইন, মুসলিম পারিবারিক আইন ও বিধিমালা, মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান বিবাহ ও তালাক–সম্পর্কিত আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংক্রান্ত ইত্যাদি বই।

বিচারকের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে পাঠাগারে আরও বই সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছেন বই অনুরাগীরা।

আদালতের একাধিক সূত্র জানায়, মামলার নির্ধারিত তারিখে সকালে আসামিদের জেলা কারাগার থেকে এনে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের হাজতখানায় রাখা হয়। এভাবে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ আসামিকে সেখানে আনা হয়। সংশ্লিষ্ট আদালতে শুনানি শুরুর আগপর্যন্ত আসামিরা হাজতখানায় অপেক্ষায় থাকেন।

এছাড়া জামিন না হওয়া আসামিদের আবারো সেখানে এনে রাখা হয়। পরে সন্ধ্যার আগে তাদের সেখান থেকে কারাগারে নেওয়া হয়। এ সময় যাতে তারা বই পড়ে সময় কাটাতে পারেন, এজন্য এ পাঠাগার করা হয়েছে বলে জানান চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিত্যানন্দ সরকার।

ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হালিম মন্তব্য করে বলেন, এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। এখনকার আসামিদের বেশির ভাগই পড়াশোনা জানেন। আইনের বিভিন্ন বই ও মনীষীদের জীবনী পড়ে আসামিদের মন থেকে অপরাধপ্রবণতা দূর হবে। তারা নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করবেন বলে আমার মনে হয়।

তিনি আরও বলেন, হাজতিরা সমাজের অংশ। তাদের অবহেলা, ঘৃণা নয় বরং সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। এটি তাদের মৌলিক অধিকার।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম