চাকরির ফাঁদে ফেলে নারীদের ধর্ষণ করতেন তিনি
চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৩, ১১:১৭ পিএম
আউট সোর্সিং চাকরির ফাঁদে পড়ে চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটের উচ্চমান সহকারী মো. আল-আমিন সিকদারের (৩৬) ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি নারী। তার এ ধরনের যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ না পেলেও সর্বশেষ একজন কিশোরীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন আল-আমিন।
গত ১৮ মে আল-আমিন অফিস সহায়ক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় ৫ জুন চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন কিশোরীর মা। মঙ্গলবার (২০ জুন) এ ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং মামলার তথ্য প্রতিবেদকের হাতে আসে।
অভিযুক্ত আল-আমিন সিকদার চাঁদপুর শহরের কাঁচা কলোনি এলাকার মো. নূরনবীর ছেলে।
মামলার বিবরণ ও ধর্ষণের শিকার কিশোরীর জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, গত এক বছর পূর্বে ধর্ষণের শিকার কিশোরী চাঁদপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে চাকরি নেয়। তার দায়িত্ব ছিল চাঁদপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটে নিচতলায় উচ্চমান সহকারী আল-আমিন সিকদারের কক্ষে। তখন থেকেই ওই কিশোরীকে কারণে ও কারণে কাছাকাছি আসা এবং কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তিনি।
এরপর গত এপ্রিল মাসের বেতন নেওয়ার জন্য তার কক্ষে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করে। ওই অবস্থায় কিশোরী কোনোমতে তার ইজ্জত বাঁচানোর চেষ্টা করে এবং চিৎকার দিয়ে ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে।
এ ঘটনায় কিশোরীর মা মামলা করলে এবং মামলার আর্জিতে ধর্ষণের চেষ্টা লিখলেও বিচারকের কাছে এবং পৃথক বক্তব্যে তার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে বলে শিকার করেন।
কিশোরীর বক্তব্যের আলোকে চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী ৫ জুন কিশোরীর বক্তব্য গ্রহণপূর্বক তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পরীক্ষা শেষে তার মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়। আগামী ২৬ জুনের মধ্যে ডাক্তারি রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে বলে বিচারক আদেশ দেন।
ধর্ষণের শিকার কিশোরী পৃথক বক্তব্যে বলেন, সে চাকরিতে যোগদানের পর এক মাস পর্যন্ত পরিবেশ ভালো ছিল; কিন্তু এক মাস পর থেকেই আল-আমিন কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। এরপর তাকে অফিসের বাথরুমে এবং ঢাকায় অফিসের কাজের কথা বলে লঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় ধর্ষণের চেষ্টা করে। এছাড়া কিশোরীকে দুর্বল করার জন্য সে পূর্বে যেসব নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছে সেসব ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে উত্তেজিত করে এবং ধর্ষণের জন্য সম্মত করায়।
চাঁদপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম মাহবুবুর রহমান। তার কাছে অভিযুক্ত উচ্চমান সহকারী আল-আমিন সিকদারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা চলমান আছে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি মামলার বিষয়ে তিনি কোনো কিছুই জানেন। তিনি এখন জেনেছেন। এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিয়ে দাপ্তরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এর পূর্বে তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে চাঁদপুরের সাংবাদিক ও প্রেস ক্লাবের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানহানিকর লেখা পোস্ট করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। ওই মামলাটি ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ও মামলার চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ওই মামলায় চারজন আসামির মধ্যে আল-আমিন সিকদার প্রধান আসামি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ জানান, আল-আমিন সিকদারের বিরুদ্ধে প্রেস ক্লাবের পক্ষে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা চলমান রয়েছে। এ ধরনের অপকর্ম করে সমাজে যারা অনাচার সৃষ্টি করে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।