স্কুলে না এসেও ১১ বছর ধরে বেতন তোলেন অফিস সহকারী!
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩, ১১:০৫ পিএম
বগুড়ার ধুনটের বাঁশপাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী জুলিয়া আকতার জুঁই প্রতিষ্ঠানে কোনো কাজ করা তো দূরের কথা সেখানে উপস্থিত না থেকেই ১১ বছর ধরে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে সুবিধা নিয়ে আসছেন। শ্বশুর স্কুলের সভাপতি, ননদ প্রধান শিক্ষিকা ও স্বামী উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি হওয়ায় তিনি শহরে বসবাস করেও এ সুবিধা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন।
ধুনট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের বাঁশপাতা গ্রামের অভিভাবক হাবিবর রহমান এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে গত ৪ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। এর অনুলিপি শিক্ষা সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে। ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানে আলম জানান, তিনি মৌখিকভাবে এমন অভিযোগ শোনার পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগে জানা গেছে, ধুনটের এমপিওভুক্ত বাঁশপাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী জুলিয়া আকতার জুঁই উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আলিম আল রাজী বুলেটের স্ত্রী। তার শ্বশুর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন সরকার স্কুলের সভাপতি ও ননদ শামীমা সুলতানা সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। জুলিয়া গত ২০১২ সালের ১ নভেম্বর ওই স্কুলে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে যোগদান করেন। এমপিওভুক্ত তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী জুঁই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষিকার আত্মীয় হওয়ায় তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না গেলেও হাজিরা খাতায় ঠিকই স্বাক্ষর করেন। গত ১১ বছরের কর্মজীবনে তিনি স্কুলে না গিয়েও প্রতি মাসে ১২ হাজার ২০১ টাকা করে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন। ছেলের লেখাপড়ার সুবিধার্থে তিনি (জুঁই) বগুড়া শহরের বৃন্দাবনপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, বাঁশপাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষক ও কর্মচারীর মধ্যে ১৩ জন এমপিওভুক্ত। এমপিও শিটের তালিকায় ১০ নম্বরে রয়েছেন, জুলিয়া আকতার জুঁই। অথচ দীর্ঘদিন কর্মরত থাকলেও ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইমরুল কায়েস, সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক মিল্টন আজিজ ও লাইব্রেরিয়ান মাহবুবুল হাসান এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক বাঁশপাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী বলেন, অফিস সহকারী জুলিয়া প্রতিষ্ঠানে না এলেও হাজিরা খাতায় তাকে উপস্থিত দেখানো হচ্ছে। ছেলে কলেজে লেখাপড়া করায় তিনি প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরে বসবাস করেন। সংসার সামলে সেখান থেকে নিয়মিত স্কুলে আসা খুব কঠিন।
কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, তারা অফিস সহকারী জুঁইয়ের নাম শুনলেও তাকে কখনো দেখেননি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামীমা সুলতানা বলেন, অফিস সহকারী জুঁই তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। তিনি নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করেন।
জুলিয়া বলেন, তিনি বগুড়া শহরে থাকলেও স্কুলে নিয়মিত যাতায়াত করেন। কেউ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। জুঁইয়ের স্বামী ধুনট উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আলিম আল রাজী বুলেট জানান, এ অভিযোগ মিথ্যা। হাবিবর রহমান নামে বাঁশপাতা গ্রামে কেউ নেই। ধুনটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতি দু’ভাগে বিভক্ত। তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অর্থের বিনিময়ে এমন মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করিয়েছেন। ধুনট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।