বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় ধর্ষণের পর সালমাকে হত্যা করে পরকীয়া প্রেমিক
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৩, ১১:০২ পিএম
কেরানীগঞ্জের রামেরকান্দা এলাকায় ঢাকা-নবাবগঞ্জ সড়কের পাশের ঝোপ থেকে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। নিহতের নাম সালমা বেগম (৩৭)। বাবার নাম আব্দুল খালেক শেখ। বাড়ি খুলনা সদর থানাধীন বিকে মেইন রোড এলাকায়। বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় ধর্ষণের পর সালমাকে হত্যা করে পরকীয়া প্রেমিক।
সালমা ডিভোর্সি ছিলেন এবং নবম শ্রেণি পড়ুয়া তার একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়েসহ তিনি খুলনায় থাকতেন। রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায় ভাতের হোটেল ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম (৩৮) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে ৭-৮ বছর ধরে সালমার পরকীয়া সম্পর্ক ছিল।
বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় শহিদুল কৌশলে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে কেরানীগঞ্জে এনে সালমাকে ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে। এরপর ঝোপের মধ্যে লাশ ফেলে কেউ যেন পরিচয় শনাক্ত করতে না পারে সেজন্য ইট দিয়ে মুখমণ্ডল থেঁতলে পালিয়ে যায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে শহিদুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আমীনুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অলম কুমার দে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে রোববার মধ্যরাতে কেরানীগঞ্জের রামেরকান্দা থেকে পুলিশ অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে। পরে সিআইডির ক্রাইসসিনের সহযোগিতায় মৃতদেহের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তার নাম-পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর জানান, পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর ভিকটিমের মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। এরপর ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত ও তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেগুলো বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত অজ্ঞাতনামা এক আসামিকে শনাক্ত করা হয়। সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন মাসদাইর থেকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামি মো. শহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।
শহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সালমার সঙ্গে শহিদুলের ৭-৮ বছরের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। শহিদুল বিয়ের করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সালমাকে ঢাকায় আসতে বলে।
ঢাকায় আসার পর ১১ জুন বিকাল ৫টার দিকে তারা ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেখা করে। ওই রাত ১০টার দিকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে সালমাকে কেরানীগঞ্জে নিয়ে আসে শহিদুল। তারপর সে ঘটনাস্থলের ঝোপের মধ্যে নিয়ে সালমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে সালমার সঙ্গে থাকা ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে। সালমার পরিচয় যাতে কেউ শনাক্ত করতে না পারে সেজন্য পড়ে থাকা ইটের টুকরা দিয়ে মুখ থেঁতলিয়ে চেহারা বিকৃত করে শহিদুল পালিয়ে যায়।
লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় সোমবার পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করে। মামলার পর শহিদুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাবার নাম শাহাজাহান মাতুব্বর। বাড়ি বরিশালের হিজলা থানাধীন হরিনাথপুর এলাকায়।