Logo
Logo
×

সারাদেশ

এক পুলিশ কর্মকর্তার মায়ের কান্না ২৭ বছরেও বন্ধ হয়নি

Icon

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৩, ১০:৫৬ পিএম

এক পুলিশ কর্মকর্তার মায়ের কান্না ২৭ বছরেও বন্ধ হয়নি

ভাগ্যবিড়ম্বিত এক নারী সাহেরা খাতুন (৭০)। গাজীপুর মহানগরের (২১নং ওয়ার্ড) বাউপাড়া গ্রামের মৃত সাত্তারের স্ত্রী। পূর্বে আরও দুই সংসারের স্ত্রী মারা যাওয়ায় সাহেরা খাতুনকে বিয়ে করেছিলেন সাত্তার। এই সংসারে এক ছেলে রেখে স্বামী মারা যান ১৯৯৬ সালে। প্রথম থেকেই অভাব ও চরম দারিদ্র্যতার মধ্যে ছিল পরিবারটি।

পূর্ববর্তী সংসারের আরও তিন ছেলে ও তিন মেয়ে ছিল সাত্তারের। তাদের মা না থাকায় নিজ সন্তানের ভালবাসায় তাদের কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছিলেন এই সাহেরা খাতুন। তবে সেই সৎ সন্তানদের আসল রূপ তিনি দেখলেন স্বামীর মৃত্যুর পর।

২৭ বছর আগে নিজের একমাত্র কিশোর ছেলে শাহাদাৎ হোসেনকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য করলেন সৎছেলে ইউনুস মিয়া। নিজে সংগ্রাম করে ছেলেকে মানুষ করে গড়ে তুললেন সাহেরা। একমাত্র ছেলে শাহাদাৎ হোসেন এখন পুলিশের উপ-পরিদর্শক। জীবনের শেষ সময়ে স্বামীর বাড়িতে এসে নিজের ও সন্তানের জমির হিস্যা দাবি করলে আবারো সৎছেলে সেই ইউনুসের রোষানলে পড়েন এই নারী। জমির হিস্যা না দিতে নানা ফন্দিফিকির করছেন তিনি।

সাহেরা খাতুনের একমাত্র ছেলে শাহাদাৎ হোসেন নরসিংদী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের চৌকস সাব-ইন্সপেক্টর। কর্মদক্ষতার জন্য শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তার পুরস্কারও রয়েছে তার ঝুলিতে। তবে সৎ ভাইদের অত্যাচার নির্যাতনে এখন মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছেন তিনিও।

স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উদ্যোগে সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে পৈতৃক ভিটেতে সম্প্রতি একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। সেখানেই একা থাকেন তার বৃদ্ধ মা সাহেরা খাতুন। সেখানেও বাড়ি ছেড়ে দিতে নিয়মিত হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন তার সৎছেলে ইউনুস।

সৎছেলের নির্যাতনের শিকার সাহেরা খাতুন বলেন, আমার পুরো জীবনই সংগ্রামের। সংগ্রাম করতে করতে শেষ বয়সে এসে এখন ক্লান্ত। আগে ছিল ছেলেকে মানুষ করার সংগ্রাম, এখন সৎছেলের নির্যাতন। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। জীবনে ইচ্ছা ছিল স্বামীর ভিটেতেই যেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারি। ২৭ বছর বাড়ি ছিল না, সৎছেলে আমাদের জমি বুঝিয়ে দেননি, পরে স্থানীয়দের চাপে সীমানা করে দিলে আমরা বাড়ি করি। এখন আবার বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি। আমি একা বাড়িতে থাকি, নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় যেন বাড়ি ছেড়ে দেই।

তিনি আরও বলেন, জমির হিস্যা থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে নানাভাবে চেষ্টা করে আসছে এই সৎ ছেলে ইউনুস। এবার হুমকি দিচ্ছে সে নাকি ছেলের চাকরির ক্ষতি করবে। তিনি এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বর্তমানে নরসিংদী জেলার গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত উপ-পরিদর্শক শাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, বিগত ২২ বছর ধরে পুলিশে চাকরি করছি সুনামের সঙ্গে। বাবার মৃত্যুর পর অনেক কষ্ট করেছি। আমার সব জমিই সৎ ভাইয়েরা দখল করেছিলেন। পৈতৃক ভিটেতে একটি ঘর নির্মাণের অবস্থা তার ছিল না। মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী একটি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেই। সৎ ভাইদের কাছে জমির হিস্যা দাবি করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও দেয় বিভিন্ন দপ্তরে। পরে তদন্ত করলে তা মিথ্যা প্রমাণ হয়। এখন বাড়ি করার পর নতুন করে আবারো ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সেই সৎ ভাই। তার বাড়ির প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি ও বাড়ি ছেড়ে দিতে তার মাকেও হুমকি দিচ্ছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, নিজে পুলিশ বিভাগে কর্মরত। পুলিশের বদনাম হোক এমন কিছু কখনো করতে চাইনি। তাই সৎ ভাইয়ের অত্যাচারেও মুখ বুঝে সব সহ্য করেছি। এখন আর পারছি না।

ইউনুসের আপন ছোট ভাই বিল্লাল হোসেন। তাকেও নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন ইউনুস। তিনি বলেন, তার পিঠাপিঠি ভাই শাহাদাৎ। শাহাদাৎ ও তার মায়ের জমি বড় ভাই ইউনুসকে বুঝিয়ে দিতে বললে সেও আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। ইউনুসের জামাতাও পুলিশের এএসআই। তিনি মেয়ের জামাতাকে দিয়েও আমাদের হুমকি দেন।

বাউপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন মোল্লা। তিনি বলেন, শাহাদাৎ ও তার মায়ের ওপর যা হচ্ছে তা পুরোটাই অমানবিক। দীর্ঘ ২৭ বছর তারা বাড়িতে আসতে পারেনি। আমরা এলাকাবাসী মিলে ইউনুসকে সঙ্গে নিয়ে সাহেরা খাতুন ও শাহাদাতের জমি বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। সেখানেও নাকি আবারো ঝামেলা পাকিয়েছেন ইউনুস। তিনি অনেক দুষ্ট প্রকৃতির। তবে আমরা চাই এ বিষয়টার মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউনুস মিয়ার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা। এটা তার পারিবারিক বিষয় এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম