বিএনপি নেতার মৃত্যুতে স্ত্রীকে উত্তরাধিকার চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেন আ.লীগ নেতা

টেকেরহাট (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৩, ০৮:১১ পিএম

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মিহির কান্তি মারা যাওয়ায় তার স্ত্রী শিপালী হালদারকে পরিষদের উত্তরাধিকার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য খন্দকার মনজুরুল হক লাভলু।
আর এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষসহ মুকসুদপুর এলাকায় চাঞ্চল্য ও আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
জানা গেছে, গত রোববার বেলা সাড়ে ১০টায় সদ্যপ্রয়াত মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মিহির কান্তির বাড়িতে এক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ শোকসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য খন্দকার মনজুরুল হক লাবলু। এ সময় মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাবির মিয়া, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল মোল্যা, ননীক্ষীর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবর শেখ উপস্থিত ছিলেন।
৪ মিনিটের অধিক ওই ভিডিওতে দেখা যায়, খন্দকার মনজুরুল হক লাবলু বলেন, জলিরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিহির কান্তি রায় আমার অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। তাই তার স্মৃতি ধরে রাখতে তার স্ত্রী জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরাধিকার। আমি যত দিন বেঁচে আছি এই পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব আমি দেখব। মিহিরের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। পরপারে সে যেন ভালো থাকে।
এছাড়া তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন- জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিহিরের আকস্মিক ও অকাল মৃত্যুর পর আমি তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে, আমি নিজেই শোকে কাতর ও আপ্লুত হই। এটা সহ্য করা কঠিন। আল্লাহ পাক মিহিরের পরিবারের সদস্যদের ওপর রহমত দান করুন ও মিহিরের আত্মার শান্তি কামনা করি। আমি তার পরিবারের সঙ্গে আছি এবং থাকব ইনশাআল্লাহ।
এরপর এ ঘোষণার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।
এ ব্যাপারে ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রনি আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, ইউনিয়ন পরিষদের কোনো চেয়ারম্যান মারা গেলে তার স্ত্রীকে উত্তরাধিকার ঘোষণা করা যায় না। নির্বাচনের মাধ্যমে যিনি জয়ী হবেন তিনিই চেয়ারম্যান হয়ে পরিষদ চালাবেন; কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য মনজুরুল হক লাবলু যেটা ঘোষণা করেছেন সেটা আইন পরিপন্থি।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার হোসেন বলেন, খন্দকার মনজুরুল হক লাবলু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য। কেউ মারা গেলে তার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে পারেন; কিন্তু কাউকে ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরাধিকারী ঘোষণা দিতে পারেন বলে আমার জানা নেই।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহিদুর রহমান টুটুল বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য হয়েও বিএনপির কোনো নেতা মারা গেলে তিনি তার অনুভূতি জানাতে পারেন, শোক জানাতে পারেন। কিন্তু কোনো সভায় যোগ দিয়ে বক্তব্য দিতে পারেন না। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ বিব্রতবোধ করছেন। তিনি কিভাবে বিএনপির নেতার স্ত্রীকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে আসেন। এ বিষয়টি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানানো হবে। এরপর সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম সিকদার বলেন, বিএনপি নেতার স্ত্রীকে তিনি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তিনি এর আগেও আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেছেন। তিনি এলাকায় আসলে বিএনপি কর্মীদের সাথে নিয়ে চলেন। তিনি নাকি আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। তিনি কি বিএনপি নেতা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করবেন তা আমার বোধগম্য নয়। কারণ জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাদের নেত্রী প্রার্থী দিবেন। তিনি এর বিরোধিতা করেছেন। তিনি কিভাবে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য হন এটা আমার বুঝে আসে না। আমি নেত্রীর কাছে দাবি জানাই এমন নেতাদের যেন দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য খন্দকার মনজুরুল হক লাবলু সাংবাদিকদের বলেন, মিহির কান্তি রায় আমার এলাকার একজন হিন্দু কমিউনিটির নেতা। তিনি বিএনপি বা আওয়ামী লীগ করেন সেটি কোনো বিষয় না। আমি যখন কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি, সেও তখন ছাত্র রাজনীতি করেছেন। হিন্দুদের মধ্যে তার ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে। যেহেতু আমার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল এবং তিনি হিন্দু কমিউনিটির নেতা তাই তার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়েছি।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালাম খান বলেন, জলিরপাড় পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিহির রায় আমাদের আগের কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। বর্তমান উপজেলা আহবায়ক কমিটিতে মিহির কান্তি রায়কে যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে জেলা কমিটির আহবায়ক শরীফ রাফিকুজ্জামান এবং এম মুনসুর আলী ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট অনুমোদন দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, কোনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মারা গেলে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ওই ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান পরিষদ চালাবেন। বাইরের কেউ পরিষদ চালাতে পারেন না। এখন আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানাব। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনকে জানাবে। পরে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের আয়োজন করবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিভা মণ্ডলকে পরাজিত করে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত। তিনি রাজনৈতিক জীবনে মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। তিনি গত ৪ জুন সকালে মারা যান।