খাটের নিচে লাশ রেখে স্বামীসহ চার মেয়ের ৬ দিন বসবাস
মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৩, ১০:৪৭ পিএম
মৃত্যুর ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও পুনরায় জীবিত হওয়ার আশায় লাশের সঙ্গে বসবাস করে একটি পরিবার। নরসিংদীর মনোহরদীতে গৃহবধূর লাশ খাটের নিচে রেখে বসবাস করেন স্বামী ও তাদের চার মেয়ে। পুরো পরিবারটি একটি পিরের মুরিদ বলে জানা গেছে।
ঘরের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার ও ওই পরিবারের সদস্যদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলা সদরের পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ডে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, মনোহরদী পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে স্ত্রী ও ৪ সন্তান নিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন মোক্তার উদ্দীন তালুকদার। বুধবার ভোরে তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা নাজমা (৫৬) মারা যান। তিনি নাকি মৃত্যুর আগে তার পরিবারের সবাইকে বলে যান- মৃত্যুর ৩-৪ দিন পর তিনি পুনরুজ্জীবিত হবেন।
পিরে বিশ্বাসী পরিবারটি তার লাশ এ বিশ্বাসে বসত ঘরের খাটের নিচে রেখে খুব স্বাভাবিকভাবে দিন কাটাচ্ছিলেন। এতে ঘুর্ণাক্ষরেও পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনদের কেউ এত বড় ঘটনা আঁচ করতে পারেননি। পরে ঘরের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ শনিবার মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর খাটের নিচ থেকে নাজমা তালুকদারের (৫৬) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। এ সময় নাজমার স্বামী মোক্তার উদ্দীন তালুকদার ও তার চার মেয়ে ঘরের ভেতরই অবস্থান করছিলেন।
প্রতিবেশীরা আরও জানায়, পরিবারটি সারা দিনই ঘরের দরজা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতরেই অবস্থান করত। পুরো পরিবারটিই একটি শিক্ষিত পরিবার। মোক্তার উদ্দিন তালুকদার একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক; তার মেয়ে মাহবুবা তালুকদার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন। দীর্ঘদিন যাবত তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলাও রয়েছে। তার প্রতিটি সন্তানই অনার্স-মাস্টার্স পাশ। একটি শিক্ষিত পরিবারের এমন আচরণে এলাকার মানুষ হতভম্ব। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের সবাইকে থানায় নিয়ে গেছে। বিষয়টির রহস্য উদঘাটনে পুলিশি তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
মনোহরদী পৌরসভার মেয়র আমিনুর রশিদ সুজন বলেন, আমি এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি- ওই পরিবারটি একটি পিরের মুরিদ ছিল এবং তারা এলাকার কারো সঙ্গে মিশতেন না বাসায় অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকতেন। ওই বাড়ি থেকে তীব্র গন্ধ বের হতে থাকলে দরজায় নক দিলেও না খোলায় পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙ্গে লাশ বের করা হয়।
মনোহরদী থানার ওসি মো. ফরিদ উদ্দীন জানান, পরিবারটি এক পিরের মুরিদ ছিলেন বলে জানিয়েছে। তারা প্রতিদিন ভোর ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত জিকির করতেন। জিকিররত অবস্থায় নাজমার মৃত্যু ঘটে বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নরসিংদী মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ও পরবর্তী তদন্তে বিস্তারিত জানা যেতে পারে।