রাজশাহী মহানগরীর ডিসি বাংলো সংলগ্ন শ্রীরামপুর টি-বাঁধের অদূরে পদ্মায় গোসলে নেমে নিখোঁজ হওয়া দুই বন্ধুর লাশ একে একে ভেসে উঠেছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে দুই লাশই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রোববার বেলা ১২টার দিকে ঘটনাস্থলের পাশেই রিফাত খন্দকার গলিবের (১৭) লাশ ভেসে ওঠে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
ভোর সাড়ে ৬টার দিকে সারোয়ার সাইমের (১৭) লাশ উদ্ধার করা হয়। সাইমের লাশ বেলা সাড়ে ৯টায় নগরীর মতিহার থানার মেহেরচন্ডি এলাকায় তার বাসায় নেওয়া হয়। আর গালিবের লাশ দুপুর ১টার দিকে বোয়ালিয়া থানার দরগাপাড়া এলাকায় বাসায় নিয়ে যান নিকটাত্মীয়রা।
তারুণ্যের দুরন্তপনা নিয়ে বাসা থেকে গোসলে বের হওয়া এই বন্ধুই নিথর লাশ হয়ে শেষবারের মতো নিজেদের বাসায় পৌঁছেছে। কাঁকবন্ধ্যা মায়ের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল গালিবের লাশ দেখেই আঁতকে উঠে চিৎকারে ভেঙে পড়েন মা লাকি আক্তার। শোকে নিথর সাইমের মাও। আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীদের মাঝেও নেমেছে শোকের আঁধার। আঁচলে চোখের পানি মুছে এই দুই জননীকেই সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, রিফাত খন্দকার গালিবের বাবা গত ৩ বছর আগে মারা যায়। তার ভাই-বোন কেউ নেই। বিধবা মায়ের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল ছিল গালিব। রিফাত খন্দকার গালিবের ফুফাতো বোন রিতা খাতুন জানান, গালিবের বাবা গত ৩ বছর আগেই গত হয়েছেন। গালিব ছাড়া তার মায়ের আর কেউ নাই। কোনো আবদার অপূরণ রাখেননি। সেই সন্তান নদীতে নিখোঁজ হওয়ার খবরে একেবারে ভেঙে পড়েছেন তিনি। সারারাত চোখের পলক একটি মুহূর্তের জন্যও বুজেনি। আল্লাহর কাছে সারারাত কান্নাকাটি করে সন্তানকে ভিক্ষা চেয়েছেন।
এদিকে সাইমের মা সন্তানের লাশ পাওয়ার পর আহাজারিতে ফেটে পড়েন। সংবাদকর্মীদের লক্ষ্য করে বলতে থাকেন, আমার ছেলে সাঁতার জানত। তারপরও আমার ছেলে বাঁচল না। আপনারা সরকারকে বলে পদ্মায় গোসলে নামার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা করেন। আর কোনো মা যেন সন্তান হারা না হয়।
এদিকে গালিবের লাশ পাওয়ার পর উদ্ধার অভিযান শেষে করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স রাজশাহীর উপপরিচালক ওহিদুল ইসলাম বলেন, একজনের মৃতদেহ সকালেই উদ্ধার হয়েছে। আরেকজনকে ১২টা ৫ মিনিটে উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত একটানা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে প্রথম দিনের মতো অভিযান শেষ করে আমাদের ছয়জনের দুইটি ডুবুরি দল।
রোববার ভোরে আবারো অভিযান শুরু করার কথা ছিল। এর মধ্যেই স্থানীয়রা একটি লাশ ভেসে উঠতে দেখে। এরপর লাশ উদ্ধার করা হয়।
প্রসঙ্গত, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পদ্মায় গোসলে নেমে নিখোঁজ হয়েছিলেন- নগরীর মতিহার থানার মেহেরচন্ডি এলাকার সাইদুর রহমানের ছেলে সারোয়ার সাইম (১৭) এবং বোয়ালিয়া থানার দরগাপাড়া এলাকার খাজা মইনুদ্দীনের ছেলে রিফাত খন্দকার গলিব (১৭)। তারা দুজনেই রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।