সিআইডি দেখে মুক্তিপণের জন্য গৃহশিক্ষকই হত্যা করে শিশু আদিলকে
চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৩, ০৬:০৭ পিএম
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ির আনোয়ার হোসেনের শিশুপুত্র আদিল মোহাম্মদ সোহান (৮) হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত গৃহশিক্ষক মো. আবদুল আহাদকে (১৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ভারতীয় টিভি সিরিয়াল সিআইডি দেখে শিশুর পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ মাটিতে পুঁতে রাখে বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায় আহাদ।
বুধবার দুপুরে চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ির আনোয়ার হোসেন তার শিশু পুত্র আদিল মোহাম্মদ সোহান গত ১৫ মে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর মসজিদ থেকে বাড়িতে না আসলে বিভিন্ন স্থানে খুঁজে না পেয়ে পরদিন ১৬ মে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন। এ ঘটনায় পুলিশের তদন্ত কাজ চলছিল। ১৯ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সংবাদ পেয়ে নিখোঁজ শিশুর বাড়ির পাশের জমি থেকে আদিলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় ওই দিনই শিশুর পিতা আনোয়ার হোসেন ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশের একটি টিম মামলাটির তদন্ত শুরু করে। পুলিশ ধারণা করে যে সময়ের মধ্যে শিশু আদিল নিখোঁজ হয়, তা খুবই কম সময়। খুব কাছের লোকের মাধ্যমে এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, পুলিশ তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুর গৃহশিক্ষক মো. আবদুল আহাদকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে কিশোর অপরাধী আবদুল আহাদ জানান, তিনি নিয়মিত ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি দেখেন। সেই আলোকে ঘটনার দিন মাগরিবের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মসজিদ এলাকা থেকে আদিলকে বাড়ির পাশের নির্জন নার্সারিতে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে আদিলের মুখ ও গলায় চেপে ধরলে সে নিস্তেজ হয়ে যায়। ওই সময় আহাদ তার মায়ের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আদিলের মার কাছে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য কল দেয়; কিন্তু আদিলের মা তার সন্তানকে খুঁজতে গিয়ে মোবাইল ফোন ঘরে রেখে যান। যে কারণে ফোন রিসিভ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে কিশোর অপরাধী আহাদও আদিলের পরিবারের সঙ্গে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। রাত ১২টার দিকে সবাই ঘরে চলে গেলে আহাদ ঘটনাস্থলে আদিলকে দেখতে যান, গিয়ে দেখেন আদিল জীবিত নেই। এরপর সে রাত ১টার দিকে প্রতিবেশী রেনু বেগমের রান্নাঘর থেকে দা ও কোদাল এনে মাটি খুঁড়ে জনৈক আবদুল মতিনের গরুর জন্য চাষকৃত জমিতে আদিলের মরদেহ পুঁতে রাখে। এরপর দা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ওই রান্নাঘরে রেখে দেয় এবং তার মায়ের ব্যবহৃত সিমকার্ড বাচ্চু মিয়ার পুকুরে ফেলে দেয়।
পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, কিশোর অপরাধী মো. আবদুল আহাদের বয়স ১৭ বছর ৬ মাস। সে একই এলাকায় শরীফ তালুকদারের ছেলে। এ বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তার পরিবারে আর্থিক সংকট আছে। আদিলের গৃহ শিক্ষক হওয়ার কারণে সে ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিল। সে জানতো আদিলের ঘরে কিছু টাকা আছে। যে কারণে তিনি এ পরিকল্পনা করে। সিরিয়ালে দেখেছে ৪০ সেকেন্ড মুখ চেপে ধরলে মারা যায় না এবং অজ্ঞান হয়ে থাকে; কিন্তু তার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগেনি বরং শিশুটির মৃত্যু হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথ, ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান, চাঁদপুর প্রেস ক্লাব সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহসহ জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক।