রংপুরে গত দুদিন ধরে অব্যাহত ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে রংপুর নগরীসহ জেলার পীরগাছা, কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়ায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে প্রায় দুই হাজারের বেশি বাড়িঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার গাছপালা।
খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানা গেছে। ঝড়ে আম, ভুট্টা, গম, ধান, কলাসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পীরগাছা উপজেলায়। এ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ে কান্দিরহাট স্কুল এন্ড কলেজের একটি ভবন ধংসস্তূপে পরিণত হয়।
স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ করছে। এতে নারী-শিশুসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন। গত সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই দফায় তীব্র বেগে বয়ে যাওয়া ঝড়ের সঙ্গে পড়েছে শিলাবৃষ্টি।
এদিকে ঝড়ের পরেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের স্বজন ও স্থানীয়রা সহযোগিতায় এ দুর্যোগে সবাই মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ করছেন।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, গত দুই রাতে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৭৩ কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বয়ে যাওয়া ঝড়ে জেলার পীরগাছা উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের কাবিলাপাড়া, বাঘমারা, মাঝবাড়ি, দোয়ানী, নিজপাড়া, দাদন, দেয়ানী, মনিরামপুর, দিগটারী ও পূর্ব পাঠক শিকড় গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় ঘরবাড়ি, উঠতি ফসল। এসব এলাকার প্রায় ৬ শতাধিক বাড়িঘর।
রংপুর নগরীর রবাটসনগঞ্জ, মাহিগঞ্জ, লালবাগ, তামপাট, দর্শনা, আজিজুল্যাহ, হোসেননগরসহ জেলার কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ের আঘাত হানে। এতে বাড়ি-ঘর ছাড়া স্কুল-মাদ্রাসা ও বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এদিকে সোমবার রাতে প্রথম দফা ঝড়ে রংপুর মহানগরীসহ পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল বগুড়াপাড়া, পরাণ, শালমারা, ব্রা²ণীকুন্ডা বাজার, ছাওলা, পারুল, ইটাকুমারি, কল্যাণী ও অন্নদানগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা, কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ, টেপামধুপুর, শহীদবাগ ও সারাই ইউনিয়ন এবং গঙ্গাচড়া উপজেলার উপজেলার কোলকোন্দ, লক্ষীটারী, গজঘন্টা, মর্ণেয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নসহ রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
হঠাৎ হওয়া এ ঝড়ে কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। পাশাপাশি উড়ে গেছে স্থাপনা। এতে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপড়ে গেছে কয়েকশ গাছ। এছাড়া ঝড়ো বাতাসে আম, লিচু, পাট, ভুট্টা, গম, ধান, শাক-সবজিসহ উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের পিলার ভেঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হক সুমন বলেন, গত দুই দিনের ঝড়ে উপজেলার কান্দি, ছাওলা, পারুল, সদর, তাম্বুলপুর এবং ইটাকুমারী ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। মানুষজন ভীষণ কষ্টে আছে। তাদের রাতে থাকতে হবে খোলা আকাশের নিচে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি বাড়িঘর ধরে ধরে তালিকা করছি। একটি তালিকা ডিসি অফিসে পাঠানো হয়েছে। দ্রুতই সরকারিভাবে তাদের সহযোগিতা করা শুরু হবে বলে জানান তিনি।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে করছে কৃষি বিভাগ। পাশপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ধানসহ অন্যান্য ফসলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।