Logo
Logo
×

সারাদেশ

কলেজশিক্ষককে তুলে নিয়ে টাকা আদায় 

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ০৬:৩২ পিএম

কলেজশিক্ষককে তুলে নিয়ে টাকা আদায় 

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে কলেজের সামনে থেকে এক শিক্ষককে ধরে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। 

মঙ্গলবার উপজেলার রাজাবাড়ি হাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই শিক্ষকের নাম সিরাজুল ইসলাম (৫২)। তিনি রাজাবাড়ি ডিগ্রি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক। গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে তিনি সাময়িক বরখাস্ত আছেন।

সাময়িক বরখাস্ত থাকলেও বিধি অনুযায়ী সিরাজুল ইসলামকে কলেজে হাজিরা দিতে হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কলেজে ঢোকার সময় তাকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে যান এলাকার কয়েকজন যুবক। কলেজ থেকে কিছুটা দূরে হাবিবুর রহমান জনি নামের এক ব্যক্তির বাড়ি ও দোকানের মাঝামাঝি স্থানে তাকে বসিয়ে রাখা হয়।
এ সময় পাহারায় ছিলেন ১০-১২ জন যুবক। দুপুরে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সেখান থেকে ছাড়া পান ওই শিক্ষক।

যারা ওই শিক্ষককে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের দাবি- হাবিবুর রহমান জনিকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২০১৬ সালে তার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নিয়েছেন শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম। বারবার তারিখ দিয়েও তিনি টাকা ফেরত দেননি। তাই তাকে ধরে আনা হয়। তবে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়নি। ওই শিক্ষকেরও অবশ্য এদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।

তবে ওই শিক্ষককে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি বিষয়টি তার স্ত্রীকে জানান। তার স্ত্রী তখন পুলিশের জরুরি সেবার ৯৯৯-এ ফোন করেন। এরপর পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও গোদাগাড়ী থানা হয়ে খবরটি পৌঁছে প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে।

দুপুর ১২টার সময় প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এবং জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) একজন সদস্য জনির দোকানের পেছনে গিয়ে ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন।

দুপুর ১২টায় রাজাবাড়ি হাটে গিয়ে দেখা যায়, জনির দোকানের পেছনের একটি জায়গায় শিক্ষক সিরাজুল ইসলামকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। মাঝে মধ্যে তার সঙ্গে কথা বলছেন দুই পুলিশ সদস্য। আশপাশে দাঁড়িয়ে আছেন জনিসহ এলাকার ১০-১২ জন যুবক।

ধরে আনার কারণ জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান জনি বলেন,২০১৬ সালে স্ট্যাম্পে সই স্বাক্ষর করে তিনি আমার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নিয়েছেন কলেজে চাকরি দেবেন বলে। তিনি চাকরিও নিয়ে দিতে পারেননি,আবার টাকাও ফেরত দেননি। তাই আমরা এখানে নিয়ে এসেছি।

কলেজ শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টায় আমি কলেজে ঢুকছিলাম। তখন এরা বলল, স্যার চলেন কথা আছে। আমি বললাম, হাজিরাটা দিয়ে আসি কিন্তু তারা বলল, সমস্যা নেই। আমরাই অধ্যক্ষকে জানিয়ে দেব। তারপর এনে তিন ঘণ্টা ধরে বসিয়ে রেখেছে। খারাপ আচরণ করেনি, কিন্তু তারা বলছে আমার কাছে নাকি টাকা পাবে।

গত বছরের জুলাইয়ে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী এই কলেজের অধ্যক্ষ সেলীম রেজাকে মারধর করেন। অফিস কক্ষে বসে এমপির সম্পর্কে করা একটি মন্তব্য শুনে তিনি ওই অধ্যক্ষের ওপর চটেছিলেন।

অধ্যক্ষ সেলীম রেজার দাবি, তার ঘরোয়া আলাপ মুঠোফোনে রেকর্ড করে ফাঁস করেছিলেন প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম। ওই ঘটনার পর চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়াসহ বেশকিছু অভিযোগে সিরাজুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অধ্যক্ষের সঙ্গে এখন তার চরম দ্বন্দ্ব।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাবিবুর রহমান জনি অল্প কিছু টাকা পেত। সে টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আমি কলেজের অধ্যক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার। তবে যারা ধরে এনেছেন তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই বলে তিনি পুলিশকে জানান। পরে দুই পুলিশ সদস্য চলে যান।

এরপর দুপুর দেড়টার দিকে সিরাজুল ইসলাম ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পান। আরও আড়াই লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে সিরাজুল ইসলামকে ছেড়ে দেন এলাকার যুবকরা।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে সিরাজুল ইসলামকে উদ্ধারে পুলিশ গিয়েছিল; কিন্তু সিরাজুল ইসলামের কোনো অভিযোগ নেই। তাই পুলিশ ফিরে এসেছে। তার কোনো অভিযোগ থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতো।

রাজাবাড়িহাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলীম রেজা বলেন, সিরাজুল ইসলাম আজ (মঙ্গলবার) কলেজে আসেননি। তিনি বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত। কলেজের সামনে থেকে কেউ ধরে নিয়ে গিয়েছিল কিনা তা আমার জানা নেই।

তিনি বলেন, ওই শিক্ষকের আর্থিক কেলেঙ্কারির শেষ নেই। হাবিবুর রহমান জনির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এটাও সত্য। জনির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একাধিকবার বসা হয়েছে। গভর্নিং বডির কাছে তিনি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে মুচলেকাও দিয়েছেন। নানা অনিয়ম থাকার কারণেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

অধ্যক্ষ স্বীকার করেন, যে অডিও নিয়ে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তার ওপর খেপেছিলেন, সেটি শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম রেকর্ড করেন বলে তিনি মনে করেন। তবে এ কারণে তার ওপর অন্যায়ভাবে কিছু করা হয়নি। শিক্ষককে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার সঙ্গেও তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম