Logo
Logo
×

সারাদেশ

পটুয়াখালী সদর থানা

মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াই ওসির দাবি ধর্ষণ হয়নি!

Icon

 যুগান্তর প্রতিবেদন, পটুয়াখালী 

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৩, ০১:৩৯ পিএম

মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াই ওসির দাবি ধর্ষণ হয়নি!

প্রতিবেশী জবেদ শিকদারের ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী দুই ঘণ্টার মধ্যে থানায় হাজির হয়ে মামলার আরজি জানালেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। মায়ের সঙ্গে থানায় হাজির হওয়া শিশুটির (১২) কথা আমলেই নেননি পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান। বরং মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াই ঘটনাটিকে তিনি মিথ্যা ও সাজানো বলে অভিহিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ১৩ঘণ্টা মা-মেয়েকে থানায় বসিয়ে রেখে তিনি শাসিয়েছেন। অভিযোগ-মোটা টাকা নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনায় এলাকাবাসী বিস্মিত হয়েছে।

সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের কুড়ালিয়া গ্রামে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। শিশুটির বৃদ্ধ মা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিতে আম কুড়াতে তার মেয়ে প্রতিবেশী জবেদ শিকদারের (৭০) বাগানে যায়। আম কুড়িয়ে আনার সময় জবেদ তাকে একটি ব্যাগ দেওয়ার কথা বলে ঘরে ডেকে নেয়। এরপর দরজা বন্ধ করে তাকে ধর্ষণ করে। ঘটনাটি টের পেয়ে জবেদের স্ত্রী সালেহা বেগম আমার মেয়েকে মারধর করে। তার হাত থেকে রেহাই পেতে বিবস্ত্র অবস্থায় মেয়ে অন্য ঘরে আশ্রয় নেয়। এরপর বাড়ি ফিরে আমার কাছে সে সব খুলে বলে।

শিশুটির মা আরও জানান, ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে মেয়েকে নিয়ে সদর থানায় যাই এবং ওসির কাছে সব খুলে বলি। কিন্তু ওসি উলটো বলেন, তোমরা মিথ্যা কথা বলছ। নানাভাবে তিনি আমাদের শাসান। আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করার দাবি জানাই। জবেদের ছেলেরাও থানায় এসে আমাদের বাধা দেয়।

লোকজন জানায়, জবেদ শিকদারের ছেলেরা তোমাকে ক্ষতিপূরণ দেবে, ঝামেলা করার দরকার নেই। সকাল ১০ থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত থানায় ছিলাম। কেউ সহযোগিতা করেনি। উলটো পুলিশের বকাবকি খেয়েছি। ওইদিন রাতে থানার গোলঘরে পুলিশ-অভিযুক্তদের চাপের মুখে পড়েন তারা। কোনো মহলের সহযোগিতা না পেয়ে গভীর রাতে বাড়ি ফিরে আসি। শিশুটির মা আরও জানায়, ক্ষতিপূরণ বাবদ পরদিন তাকে ৮০০ টাকা দিতে চেয়েছিল জবেদ শিকদারের এক ছেলে।

জানা গেছে, শিশুটির বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ। রাস্তার পাশে ঝুপড়ি তুলে তারা বসবাস করেন। সংসার ও মেয়ের লেখাপড়া চলে মায়ের ভিক্ষার টাকায়। অতিদারিদ্র হওয়ায় তাদের পাশে কেউ নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জবেদ শিকদারের বাড়ির

একজন জানান, মেয়েটিকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে জবেদ শিকদারের স্ত্রী সালেহা বেগম পেটায়। পিটুনি খেয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘরে থেকে দৌড়ে অন্য ঘরে আশ্রয় নেয় মেয়েটি। পরে এক গৃহবধূর কাছ থেকে কাপড় নিয়ে মেয়েটি বাড়ি যায়। মাদারবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়াম্যান আমীনুল ইসলাম মাসুম জানান, ঘটনা শুনে আমি ও ইউপি সদস্য আবদুল হাই দুপুরে থানায় যাই।

ওসিকে যথাযথ ব্যবস্থা ও ভিকটিমকে আইনি সহায়তা দিতে আমরা অনুরোধ করে চলে আসি। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কমল দত্ত এবং জাহিদুল ইসলাম জানান, ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় গেলে তাকে দ্রুত মেডিকেল পরীক্ষা করাতে হবে। নারী শিশু ট্রাইব্যুনালে তাকে হাজির করে জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা বাধ্যতামূলক। এখানে অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। এদিকে এসআই শিপন জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে জবেদ শিকদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় নিয়ে আসি। তবে ঘটনাটি অসত্য বলে থানার গোলঘরে মীমাংসা হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।

সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, মেয়েটির স্বভাব বিভিন্ন বাড়ি থেকে ফল চুরি করা। ওইদিন সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাগানে কিছু আম পায় সে। আমের জন্য ব্যাগ নিতে ওই ঘরে ঢুকলে বাড়ির গৃহবধূ তাকে চোর বলে মারধর করে। চুরির অপবাদ ঢাকতে মেয়েটি এমন ঘটনা সাজিয়েছে। এছাড়া অভিযোগটি বয়স্ক লোকের বিরুদ্ধে। মেয়েটিকে মেডিকেল পরীক্ষা করা যেত কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, বয়স্ক লোকটা আনার পর দেখা গেল-বিষয়টি এমন নয়। নারী

পুলিশ দ্বারাও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। এমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি, যা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়াম্যানও জানেন। পটুয়াখালী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত এসপি সাজেদুর ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে পরিবারকে সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম