Logo
Logo
×

সারাদেশ

জীবন সংগ্রামে জয়ী মা রহিমা তালুকদার

Icon

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম

জীবন সংগ্রামে জয়ী মা রহিমা তালুকদার

রহিমা তালুকদার। পুরো নাম সৈয়দা রহিমা তালুকদার। তিনি নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকসেদুর রহমান লেবুর মা। তার জীবনে রয়েছে কঠিন জীবন সংগ্রাম; কিন্তু সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে তিনি আজ সফল মা। সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন আদর্শ মানুষ হিসেবে। তিন ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে মোকসেদুর লেবু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেজো ছেলে মোখলেছুর রহমান লিটন একজন ব্যবসায়ী ও ছোট ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান রিপন পুলিশ সুপার হিসেবে নীলফামারী জেলায় কর্মরত। দুই বোন সাহিদা বেগম ও শাহনাজ পারভীন গৃহবধূ। সফল এ মায়ের সঙ্গে কথা হয় তার বড় ছেলের বাসায় বসে। 

রহিমা তালুকদার জানান, উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের সালেহাবাদ কৃষ্ণপট্টি গ্রামের তালকুদার বাড়িতে তার জন্ম। বাবা মৃত শামছুদ্দিন তালুকদার। এগারো ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন নবম সন্তান। যখন তার বিয়ে হয়, তিনি তখন মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। তার স্বামী নালিতাবাড়ী-কাকরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন। বিয়ের পর তাদের কোল আলো করে জন্ম নেয় তিন ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে মোকসেদুর রহমান লেবু যখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তখন শাহাব উদ্দিন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ নিয়ে সংসারে শুরু হয় অশান্তি। ছোট ছোট পাঁচটি সন্তান নিয়ে মা রহিমা পড়ে যান অকুল দরিয়ায়। তিনি দমে যাননি, বাবার বাড়ির কিছু ওয়ারিশের সম্পত্তি নিয়ে শুরু করেন জীবন যুদ্ধ। খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যান। 

তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, বড় ছেলেটিকে ময়মনসিংহের মৃতুঞ্জয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু খরচ চালাতে না পেরে তাকে এনে নালিতাবাড়ীর হিরন্ময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করি। এখান থেকেই সে এসএসসি পাশ করে স্থানীয় নাজমুল স্মৃতি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়। আমার অভাবের সংসারে টিউশনি করে জোড়াতালি দেই। অন্য ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগান দেই। ছেলেমেয়েদের এই পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে কতদিন যে উপোস করতে হয় তার কোনো হিসাব নেই। 

তিনি বলেন, আমার নামে যেটুকু বাড়িভিটা ছিল, তাও একসময় আমার স্বামী বিক্রি করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। সেই মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু রক্ষা করতে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে আমার ১৯টি মামলায় লড়তে হয়। সেসব দিন অতিক্রম করে কলেজে পড়ার সময়ই বড় ছেলেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করি। সে ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করে। নাজমুল স্মৃতি কলেজে ভিপি নির্বাচিত হয়। শ্রমিক লীগ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। বর্তমানে সে জনগণের ভোটে উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।  মেজো ছেলে ব্যবসায়ী। ছোট ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান রিপন সুনামের সঙ্গে নীলফামারী জেলায় পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করছে। আজকে আমার চেয়ে সুখী আর কেউ নেই। আমি হজ করেছি। সব সময় নামাজ কালাম পড়ে নাতিদের নিয়ে সময় কাটাই। আর আল্লাহর কাছে সন্তানদের মঙ্গল কামনায় দোয়া করি। 

নিভৃতচারী রহিমা তালুকদার সফল মা হিসেবে চলতি বছর পেয়েছেন জয়িতা পুরস্কার। তিনি বলেন, জীবনে যত বাধাই আসুক, যত কষ্টই থাকুক। হতাশ হলে চলবে না। দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবেই।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম