নড়বড়ে বাঁধ ভেঙে কক্সবাজার উপকূলে প্লাবনের আশঙ্কা
জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ০১:৩৫ এএম
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নিয়ে কক্সবাজার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। সম্ভাব্য বিপদ সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন।
ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতেও চলছে প্রস্তুতি। কিন্তু উপকূলের ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকায় প্লাবনের আশঙ্কা করছেন জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, কক্সবাজারে ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৩২ কিলোমিটার অরক্ষিত। এর মধ্যে মহেশখালী ১৫ কিলোমিটার এবং কুতুবদিয়ায় ১৫ কিলোমিটার। তবে জনপ্রতিধিদের মতে, কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল, দক্ষিণ ধুরুং, মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা এবং পার্শ্ববর্তী মাতারবাড়ি পুরোটাই ঝুঁকিতে।
এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে জেলার উপকূলীয় এলাকা মহেশখালী, মাতারবাড়ী, পেকুয়া,কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, রামু, চকরিয়া, টেকনাফ এবং সদরে উপকূল ও নিম্ন অঞ্চলের বসবাস করা প্রায় ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মহেশখালীর ধলঘাটার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, ধলঘাটার পশ্চিমে আমতলী থেকে সরাইতলার ৩ কিলোমিটার, পূর্বে বটতলী ঘোনা ও বিএনপি ঘোনা সাইট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার মাটির বাঁধ ঝুঁকিতে।
এছাড়া দক্ষিণে ভারত ঘোনায় বেজার অধিগ্রহণকৃত এলাকা আরও তিন কিলোমিটারে কোন বাঁধ নেই। এই বাঁধের কারণে আরেকটি ৯১ সালের পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
মাতারবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আবু হায়দার বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে দুর্যোগ মোকাবিলা কার্যক্রম শুরু করলেও পশ্চিমের বাঁধ খুব নড়বড়ে। বিশেষ করে; জেলেপাড়া, ষাইটপাড়া, খন্দারবিল, রাজঘাট এই এলাকাগুলো খুবই ঝুঁকিতে। যদিও বাঁধের নিচে সাগরে ব্লক ফেলেছে পাউবো। মাতারবাড়ীতে ১ লাখের বেশি মানুষের বসবাস।
কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সিকদার বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র ঠিকঠাক রাখলেও কাজিরপাড়া থেকে তাবলাচর বায়ুবিদ্যুৎ এলাকা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নেই। একটু বাতাস বইতেই পানি পশ্চিম দিক থেকে ঢুকে পূর্বে দিকে বের হবে। এখানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বাস। কৃষকরা ধান ঘরে তুলেছে, কিন্তু সবজি ক্ষেতসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বলেন, কিছুদিন আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড গোমাতলীতে পাঁচ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার করেছে। তবে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছি।
অপরদিকে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ ৯নং ওয়ার্ডের জালিয়াপাড়ার ১ কিলোমিটার বাঁধও ঝুঁকিতে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় কুতুবদিয়ায় ২০০টি, টেকনাফে ৪০টি এবং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের জন্য ১০০টি জিওটিউব এবং ৭ হাজার জিওব্যাগ মজুদ আছে। কোনো এলাকায় ভাঙন অথবা পানি প্রবেশের উপক্রম হলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর পর যে সমস্ত বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সবগুলোই সংস্কার করা হয়েছে। ধলঘাটার কোহেলিয়া নদী সংলগ্ন ১৭শ মিটার নতুন বাঁধ নির্মিত হয়েছে। মাতারবাড়ির পশ্চিমে ৪০ হাজার ব্লক সাগরে ফেলা হয়েছে। এখন কোনো অংশ খোলা নেই। আমাদের বাজেট অনুযায়ী সবগুলো সংস্কার করেছি।