এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও নারীঘটিত বিষয় নিয়ে চট্টগ্রামে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ খুনের পরিকল্পনাকারী মো. ফয়সালকে গ্রেফতার করেছে র্যার।
বৃহস্পতিবার ভোরে নগরীর হালিশহর এলাকার একটি বাসায় ছদ্মবেশে অবস্থান করার খবর পেয়ে র্যাবের একটি টিম অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতার ফয়সালের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী এলাকায় চাঁদাবাজি, ইভটিজিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। গ্রেফতার ফয়সাল নোয়াখালীর কবিরহাট এলাকার নূর নবীর ছেলে।
গত ৮ মে সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরীর পাহাড়তলী থানার সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম এলাকায় মাসুম ও সজীব নামে দুই কিশোরকে ছুরিকাঘাত হত্যা করে কিশোর গ্যাং সদস্যরা।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- আগে থেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফয়সাল ও মাসুম-সজীবদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এ দ্বন্দ্বের সঙ্গে যোগ হয় নারীঘটিত বিষয়। গত ৮ মে সন্ধ্যায় জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম এলাকায় নিহত ভিকটিম মাসুমের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম শিহাব তার বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে যায়।
ওই সময় শিহাবকে উদ্দেশ করে ফয়সাল ও রবিউল বলে- ওই মেয়ের সঙ্গে তোকে মানায়নি এবং মেয়েটিকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে সামান্য মারামারিও হয়। ওই সময় ফয়সাল ও রবিউলরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। বিষয়টি আরেক কিশোর গ্যাং লিডার ইলিয়াছ মিঠুকে জানানো হয়।
ওই রাত ৮টার দিকে সিরাজুল ইসলাম শিহাবকে ফোন করে ইলিয়াছ বলে- বিষয়টি মীমংসা করতে হবে। এজন্য তার অফিসে আসতে বলে। ইলিয়াছের কথামতো সরল বিশ্বাস নিয়ে এ সময় শিহাবের সাথে বন্ধু মাসুম, সজীব, ফাহিম, রোকন, রাজিন, তুহীন, মেহেদী হাসান, ইউসুফ ও প্রান্তসহ কয়েকজন ইলিয়াসের অফিসে যায়। সেখানে আগে থেকেই ইলিয়াসের নির্দেশে ও ফয়সালের পূর্বপরিকল্পনায় রবিউলসহ প্রায় ২০-২৫ জন উঠতি বয়সি কিশোর দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওতপেতে থাকে। সেখানে আসার পর উভয়পক্ষে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় ইলিয়াছ মিঠু নামের কিশোর গ্যাংয়ের বড় ভাই ফয়সাল এবং রবিউলকে উদ্দেশ্য করে বলে- ‘শালাদের মার’।
ইলিয়াসের নির্দেশে এবং ফয়সালের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রবিউল ও তার অনুসারীরা কাঠের বাটাম দিয়ে মাসুমদের বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে মাসুম ও সজীবকে একাধিক ছুরিকাঘাত করে ফয়সাল, রনি ব্রো, বাবু এবং আকাশ। আহত মাসুম ও সজীবের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ইলিয়াছ, ফয়সাল এবং রবিউলসহ অন্যরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন মাসুম ও সজীবকে রক্তাক্ত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহত সজীবের বড় ভাই মনির হোসেন বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশের বিশেষ অভিযানে ইলিয়াছ, রবিউলসহ ৮ জন গ্রেফতার হলেও অন্য আসামিরা পলাতক ছিল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৪ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফয়সালের পূর্বপরিকল্পনার কথা জানায় বলে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক জানিয়েছেন।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম যুগান্তরকে জানান, ফয়সালকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হবে। এ ঘটনায় আরও কারা কারা ছিল তাদের গ্রেফতার করতে র্যাবের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।