মাদ্রাসাছাত্রীকে শ্লীলতাহানির দায়ে শিক্ষক গ্রেফতার, মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৩, ০৭:৫২ পিএম
নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের বলরামপুরে অবস্থিত ইসলামপুর কওমি মাদরাসা ও হেফজখানার এক ছাত্রীকে (১১) শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষক মাওলানা কামরুজ্জামানকে (৫৩) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে ওই শিক্ষকের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
শুক্রবার বিকালে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ। শনিবার ওই শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা।
গ্রেফতারকৃত কামরুজ্জামান যশোর জেলার কোতোয়ালি থানার জঙ্গলবাধাল গ্রামের মো. কওছার মোল্যার ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আড়াই বছর আগে ওই ছাত্রীকে তার পরিবার নড়াইল সদর উপজেলার বলরামপুর ইসলামপুর হাফেজিয়া নুরানি মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগে ভর্তি করেন। কামরুজ্জামান ওই মাদ্রাসার শিক্ষক।
গত ৬-৭ দিন আগে কামরুজ্জামান ওই ছাত্রীকে বলেন, রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে বারান্দার লাইট বন্ধ করে টিউবওয়েলে আসিস; কিন্তু ওই ছাত্রী তার কথা শোনেনি। এরপর গত ২ মে রাতের খাবার শেষে মাদ্রাসার টিউবওয়েল থেকে তার থালাবাটি পরিষ্কার করে রুমের মধ্য যাওয়ার সময় তাকে আবার বলে রাতের বেলায় আমি লাইট মারব, তুই রুম থেকে বাইরে চলে আসবি, ঘুমাবি না যেন। তখন সে তার কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে রুমের মধ্যে চলে আসে এবং তার সহপাঠীকে শিক্ষকের কুপ্রস্তাবের বিষয়টি অবগত করে।
ওই রাত ১১টার দিকে ওই শিক্ষক মাদ্রাসার দক্ষিণে ঘরের রুমের সামনে এসে লাইট মারতে থাকে। এ সময়ে লাইট মারা দেখে ভুক্তভোগী ও তার সহপাঠীদের ঘুম ভেঙে গেলে তারা ঘরের বাইরে এসে ওই শিক্ষককে দেখতে পায়।
এরপর ঘটনার দিন ৩ মে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই ছাত্রী দরজা খুলে রুমের বাইরে গেলে একা পেয়ে তাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদ্রাসার পশ্চিম পাশের ঘরের পেছনের বারান্দায় গোসলের জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করে। পরে ওই ছাত্রী তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে শুক্রবার বিকালে খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে।
এদিকে নড়াইল সদরের বলরামপুর হাফেজিয়া মাদরাসার প্রধান হাফেজ কামরুজ্জামানের (৫২) বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারসহ মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাদরাসার শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর আয়োজনে রোববার বিকালে মাদ্রাসা চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বক্তব্য দেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, মাদ্রাসার সভাপতি ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার টিংকা বিশ্বাস, প্রভাষক মামুনুর রশিদ, বোড়ামারা অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন, যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান আজবাহার, কামরুজ্জামান, বাবলু বিশ্বাস, লতিফ মোল্যা, সুমাইয়া ইয়াসমিন, সাবিনা খানম, ময়না খাতুনসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, কামরুজ্জামানের জনপ্রিয়তায় একটি কুচক্রীমহল তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। এরই ধারাবাহিতকায় গত ৫ মে হাফেজ কামরুজ্জামানের নামে ১০ বছরের এক শিশুর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ তার মুক্তির দাবি জানান।
এ বিষয়ে নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপা.) তারেক আল মেহেদী বলেন, মাদ্রাসার ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় সদর থানায় মামলা করেছেন ওই শিক্ষার্থীর মা। আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।