গৃহবধূকে পাশবিক নির্যাতন, উদ্ধার করল পুলিশ
নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৩, ০১:৪০ পিএম
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবিতে আরিফা নামের এক গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। রোববার দিনভর ঘরে আটকিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় ওই গৃহবধূর ওপর। পরে গভীররাতে পুলিশ গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ভুক্তভোগীর বাবা-মায়ের জিম্মায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বর্তমানে গৃহবধূ ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবার থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
আরিফার স্বামীর বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কাগদি গ্রামে।
পুলিশ জানায়, ২০২০ সালে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের বিবিরকান্দি গ্রামের স্কুলশিক্ষক আবুল কাশেম মাতব্বরের মেয়ে আরিফা আক্তারের সঙ্গে সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কাগদি গ্রামের কৃষক মফিজুর শেখের ছেলে হাসান শেখের (২৫) বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে বিভিন্ন সময় টাকার জন্য চাপ দিত। আরিফা বাবার কাছ থেকে কয়েক দফায় কয়েক লাখ টাকা এনে দিয়েছেন। কিন্তু কিছুদিন পর আবার যৌতুকের দাবীতে নির্যাতন শুরু করে। এভাবেই প্রায় ৩ বছর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে আসছিলেন আরিফা। তাদের সংসারে হাবিবা আক্তার নামে দেড় বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান আছে।
সর্বশেষ রোববার বিদেশ যাওয়ার জন্য স্ত্রী আরিফার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন হাসান ও তার পরিবার। এতে আপত্তি জানালে আরিফার ওপর সবাই মিলে শারীরিক নির্যাতন চালায়। এতে আরিফার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্বক জখম হয়। শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি প্রতিবেশীরা গোপনে ফোন করে আরিফার বাবাকে জানান। এ খবর পেয়ে মেয়েকে উদ্ধারের জন্য আরিফার বাবা সালথা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে গভীর রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আরিফাকে উদ্ধার করে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফা আক্তার বলেন, সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বামীর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন সহ্য করেও স্বামীর সংসার করে আসছি। কিন্তু আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের অমানবিকতা এবং নির্যাতন মোটেও বন্ধ হয়নি। যৌতুকের জন্য প্রায় সময়ই তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। বিদেশ যাওয়ার নামে ৫ লাখ টাকার জন্য রোববার রাতে আমাকে প্রচণ্ডভাবে মারপিট করে ঘরে বন্দি করে রাখে। আমার বাবা খবর পেয়ে, পুলিশের সহযোগিতায় আমাকে উদ্ধার করে।
নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে আরিফার স্বামী হাসান শেখ বলেন, বিয়ের সময় মেয়ের বাবার পক্ষ থেকে আমাকে পাকা ঘরসহ বিভিন্ন সামগ্রী দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো তারা আমাকে তেমন কিছু দেয়নি। এটি সাংসারিক বিষয়। এ অভিযোগ নিয়ে আমার কিছুই বলার নেই।
সালথা থানার এসআই রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা ওই গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি।