ফিল্মি স্টাইলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের হামলা, গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি
যুগান্তর প্রতিবেদন, সাভার
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম
চাঁদার দাবিতে ফিল্মি স্টাইলে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে সাভার পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম দেওয়ান ও ছাত্রলীগের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। হামলা ও মারধর করে ‘বিসমিল্লাহ ওয়াস ফ্যাক্টরি’র ক্যাশ থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা।
শনিবার বিকালে সাভার পৌরসভার আনন্দপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছয়জন গুরুতর আহত হন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শনিবার রাতে সাভার পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুম দেওয়ানকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী চুন্নু (৪৫) সাভার পৌর এলাকার আনন্দপুর মহল্লার মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে।
অভিযুক্তরা হলেন- নামাগেন্ডা মহল্লার হোসেন আলীর ছেলে সাভার পৌর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুম (২৫), একই এলাকার ইমান আলীর ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর হোসেন ওরফে টেন্ডার আলমগীর (৩০), হাবু মিয়ার ছেলে নাদিম দেওয়ান ওরফে গুণ্ডা নাদিম (২৪), হানিফ মিয়ার ছেলে সজীব (২৪), কাতলাপুর এলাকার বাসিন্দা বাবু ওরফে রড বাবু (২৮), একই এলাকার পলাশ ওরফে খাটা পলাশ (৩০), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল রানা ওরফে ধর্ষক রানা (৩৩), উলাইল এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে টিপু ওরফে বালু টিপু (২৮), মজিদপুর এলাকার বাসিন্দা পাভেল ওরফে চাঁদাবাজ পাভেলসহ অজ্ঞাত ১২ জন।
ভুক্তভোগী যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ছাত্রলীগ নেতা মাসুম দেওয়ান আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ায় এর আগেও তারা প্রাণনাশের হুমকি দেয়। শনিবার বিকালে মাসুম নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী একটি নোহা গাড়িতে এসে ফিল্মি স্টাইলে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।
এ ঘটনায় আমিসহ পাঁচজন গুরুতর আহত হই। পরে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ফিল্মি স্টাইলের হামলার ঘটনাটি সিসিটিভি ফুটেজে দৃশ্যমান। আপনারা ফুটেজ দেখলে বুঝতে পারবেন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একটি নোহা গাড়ি নিয়ে একদল সন্ত্রাসী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মহোরা দিয়ে যাচ্ছে। এ সময় মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীবাহী গাড়ি থমকে যায়। এর কিছুক্ষণ পর ১০ থেকে ১২ জন সন্ত্রাসী মহাসড়কে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে হামলা চালায়। এ সময় আশপাশের পথচারীরা এমন দৃশ্য দেখে একটি পেট্রলপাম্পে গিয়ে আশ্রয় নেন।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে পেট্রলপাম্পের এক শ্রমিক যুগান্তরকে বলেন, যে গাড়ি দিয়ে সন্ত্রাসীরা এসেছে ওই গাড়ির মালিক সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুবেল ইসলাম। তিনি মাঝেমধ্যেই এখানে গাড়ির পেট্রল নিতে আসেন। রুবেল সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের স্ত্রীর বড় ভাই। সে নতুন করে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে।
গাড়ির বিষয়ে জানতে চেয়ে রুবেল ইসলামের মোবাইলে ফোন দিলে এপাশ থেকে প্রতিবেদকের নাম শুনেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাসখানেক যাবত সাভার পৌর এলাকার আনন্দপুর মহল্লার বিসমিল্লাহ ওয়াশ ফ্যাক্টরিতে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন ছাত্রলীগ নেতা মাসুম দেওয়ান ও তার অনুসারীরা। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় শনিবার বিকালে মাসুমের নেতৃত্বে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ আলী চুন্নুকে চর থাপ্পড় মারে। পরে ভুক্তভোগীর ছেলে আবির এগিয়ে আসলে মাসুম দেওয়ান তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে চোখের পাশে আঘাত করে। এ সময় অন্য সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে।
খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এলে তাদেরও এলোপাতারি আঘাত করা হয়। পরে সন্ত্রাসীরা ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ বাক্সে থাকা নগদ চার লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় গুলি ছুড়তে ছুড়তে এলাকা ত্যাগ করে। পরে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে ছয়জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও হামলার ঘটনায় ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী চুন্নু শনিবার রাতে সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।