ঘূর্ণিঝড় মোচা: দুর্বল বেড়িবাঁধ ভাঙার আতঙ্কে কয়রাবাসী
কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৩, ০৯:৪৮ পিএম
খুলনা ও সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ বেড়িবাঁধই খুব নাজুক। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দুই থেকে তিন ফুট চওড়া মাটির বাঁধ রয়েছে। এমন দুর্বল বেড়িবাঁধ ভাঙার আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন উপকূলবাসী। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোচার (মোখা) আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী ১১ মের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। ১১-১৫ মের মধ্যে তা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি মিয়ানমারের রাখাইন ও বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তার মধ্যে খুলনা ও সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানার শঙ্কা দেখছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ১৫০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। গত বছরের মে মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় অশনি।
পাউবো সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের পর কয়রা উপজেলার ২১টি জায়গায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হয়। পাশাপাশি ২০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে সংস্কার করা হয়। বর্তমানে সাত কিলোমিটারের বেশি সংস্কারকাজ চলমান। তবে এখনো ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে আছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলার ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রা রিং বাঁধ, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট–সংলগ্ন এলাকা, মঠবাড়িয়া, ২ নম্বর কয়রা, হোগলা, গাজীপাড়া, গোলখালী, হাজতখালী, জোড়শিং ও মহেশপুর এলাকার প্রায় ১২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীতে পানি বাড়লে ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকতে পারে।
বেড়িবাঁধের পাশেই হেমলতা মণ্ডলের (৫০) ঘর। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঁধের ওপর বসে তিনি কখনো নদীর দিকে, আবার কখনো নিজের ঘরের দিকে তাকাচ্ছিলেন। কাছে যেতেই ধসে যাওয়া বাঁধটি দেখিয়ে বলেন, আগে দুবার ভেঙেছে। পরে বড় বাঁধ দিলেও সেটিও কয়েক দিন আগে ভেঙে গেছে। বালু দিয়ে বাঁধ দেওয়ায় এ অবস্থা। আরেকটু হলে গ্রামে পানি ঢুকবে। ভাঙন তাদের নিঃস্ব করেই ছাড়বে।
উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের গাজীপাড়া ও গাতিরঘেরী এলাকায় নতুন প্রযুক্তিতে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেই বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।’
স্থায়ী সমাধানের জন্য পাউবোর কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, তীব্র ভাঙনে সিসি ব্লক সরে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাটকাটা এলাকার শাকবাড়িয়া নদীর বাঁধ। উত্তর বেদকাশী থেকে দক্ষিণ বেদকাশী পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার বাঁধের ঢালে মাটি ধসে গেছে। কোথাও কোথাও দুই পাশের মাটি সরে বাঁধ সরু হয়ে গেছে।
মহেশ্বরীপুর ইউপির চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারি বলেন, প্রতি বছর বাঁধ ভাঙছে। কেউ না কেউ নিঃস্ব হচ্ছে। বর্তমানে যে কয়েক জায়গায় বাঁধ ধসে গেছে, নদীতে জোয়ার বাড়লে বড় ক্ষতি হতে পারে।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এখন দৃশ্যমান। বেড়িবাঁধের উচ্চতা বাড়াতে না পারলে উপকূলীয় অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বাড়তেই থাকবে। কয়রার বাঁধগুলোর উচ্চতা আরও ১০ ফুট বাড়ানো উচিত।
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রার স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প পাশ হয়েছে। এটি জরুরিভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা দরকার।
পাউবো খুলনা শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রোমিত হোসেন মনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা কয়রার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। বর্ষা মৌসুমের আগে ওই সব জায়গায় জরুরিভিত্তিতে কাজ করা হবে।’