যমুনা টিভির সাংবাদিকের ওপর যুবলীগ কর্মীদের হামলা
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৩, ১১:০৬ পিএম
সুনামগঞ্জে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে যুবলীগ আহবায়ক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান খাইরুল হুদা চপলের সামনেই যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদক আমিনুল ইসলামের উপর হামলা চালিয়েছে যুবলীগের কর্মীরা।
সাংবাদিক আমিনুল ইসলামকে বুকে ও মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করতে থাকে যুবলীগের সদর উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব ও তার সঙ্গীরা। বুকের বা পাশে উপর্যুপরি আঘাত হওয়ায় গুরুত্বর আহত অবস্থায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম।
এসময় হাসপাতালে উপস্থিত হন যুবলীগের আহবায়ক চপল, আহত আমিনুলকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে কর্মী সমর্থকদের সহায়তায় নিজের গাড়িতে করে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা চালান খায়রুল হুদা চপল।
সাংবাদিক আমিনুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানাযায়, বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার লালপুর এলাকায় নির্মিতব্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মান কাজে অনিয়ম বিষয়ে সম্প্রতি যমুনা টেলিভিশনের করা রিপোর্টে তদন্ত দল সেখানে যায়, তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে সাংবাদিক আমিনুল ইসলামকে তদন্তে সহায়তা করতে অনুরোধ জানালে তিনি সকাল ১০টায় লালপুরে প্রকল্প এলাকায় যান, তদন্ত দলের উপস্থিতিতেই যুবলীগ সভাপতি চপল সাংবাদিক আমিনুল ইসলামের রিপোর্টে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ও তাকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।
এসময় আমিনুল প্রতিবাদ করলে চপল তাকে শহরছাড়া করবেন বলে সকলের সামনেই হুমকি দেন। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করে তদন্ত কমিটি। এসময় চপল তার নিজ বলয়ের ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের খবর দিলে তদন্ত দলের উপস্থিতিতেই সেখানে মেটরসাইকেলযোগে জড়ো হতে থাকে নেতা-কর্মীরা।
ছাত্রলীগের সভাপতি দিপংকর কান্তি দেসহ যুবলীগের কর্মীরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাংবাদিক আমিনুল ইসলামকে হেনস্থা করার চেষ্টা করতে থাকে। দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে তদন্ত দল প্রকল্প এলাকা ত্যাগ করতে থাকে। এসময় চপল আমিনুলকে নিজের গাড়িতে করে পৌঁছে দেবেন বলে গাড়িতে উঠতে বলেন। তদন্ত দলের প্রধান নিজেও আমিনুলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চপলকে অনুরোধ জানান।
এদিকে, প্রকল্প এলাকা থেকেই চপলের গাড়ির সামনে ও পেছন পেছনে শহরের দিকে মোটরসাইকেল আসতে থাকে যবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শহরের মল্লিকপুর এলাকায় উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের সামনে চপল গাড়ি থামিয়ে সাংবাদিক আমিনুল ইসলামকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন। এসময় মোটরসাইকেলে থাকা যুবকরা আমিনুলকে ঘেরাও করে আঘাত করতে শুরু করে। এসময় যুবলীগ সভাপতি চপল দ্রুত এসে তাকে একটি মোটর সাইকেলে করে হাসপাতালে পাঠান।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরেই তার ওপর হামলা হয়েছে জানিয়ে সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের কাজে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের কারণেই যুবলীগ নেতা সজিব ও তার সঙ্গীরা আমাকে মারধর করেছে। আমি নিশ্চিত এই সংবাদ প্রকাশের কারণেই আমার ওপর হামলা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর পরই সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম খাঁন, সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা হাসপাতালে ছুটে যান।
সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন, ঘটনার সাথে তিনি জড়িত নন। ঘটনার পরপরই তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। প্রথমে তিনি কে হামলা করেছে তাকে চিনেন না বলে জানান।
হামলাকারী সজিব আপনার অনুসারী, যুবলীগের সদর উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক কিনা জানতে চাইলে পরে তিনি স্বীকার করেন। এর দায় যুবলীগের জেলা আহবায়ক হিসেবে এড়াতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা হলে তাকে পুলিশের কাছে তুলে দিবেন বলে দায়িত্ব নেন তিনি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম খাঁন বলেন, হামলার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।