Logo
Logo
×

সারাদেশ

ডাকঘর সহায়ককে হত্যা করে টাকা লুট, গ্রেফতার শফিকের স্বীকারোক্তি

Icon

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৩, ০৯:২৯ পিএম

ডাকঘর সহায়ককে হত্যা করে টাকা লুট, গ্রেফতার শফিকের স্বীকারোক্তি

ছবি: যুগান্তর

বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় প্রধান ডাকঘরে অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য্যকে (৪৮) হত্যা ও ভল্ট কেটে আট লাখ টাকা লুটের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। 

গ্রেফতার একমাত্র আসামি শফিকুল ইসলাম (৪০) পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তার কাছে ছয়টি মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে। ডিবি পুলিশের একটি দল বুধবার সন্ধ্যায় নওগাঁর সাপাহার বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

বৃহস্পতিবার বিকালে স্বীকারোক্তি রেকর্ডের জন্য তাকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এ তথ্য দিয়েছেন।

পুলিশ ও পোস্ট অফিসের সূত্র জানায়, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া উত্তরপাড়ার রামকৃষ্ণ আচার্যের ছেলে প্রশান্ত কুমার আচার্য্য প্রধান ডাকঘরে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত ছিলেন। নৈশপ্রহরী ঈদের ছুটিতে যাওয়ায় তাকে বরাবরের মতো ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

ঈদের পর দিন গত ২৩ এপ্রিল রাতের কোনো এক সময় মুখোশধারী ডাকাত পেছনের গ্রিল কেটে প্রধান ডাকঘরে ঢোকে। বারান্দায় নৈশপ্রহরীর দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক প্রশান্ত আচার্য্যকে হত্যা করে। 

ভল্টের কেটে ফেলা অংশ দিয়ে ৪৩ লাখ টাকার মধ্যে আট লাখ টাকা লুট করা হয়। এ ঘটনায় প্রধান ডাকঘরের পরিদর্শক মহিদুল ইসলাম সদর থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতির মামলা করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, মামলার পর জেলা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ ডাকঘরে হত্যা ও ডাকাতির ঘটনা উদঘাটনে মাঠে নামে। এ ঘটনায় জড়িত একমাত্র আসামিকে শনাক্ত করা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় নওগাঁর সাপাহার বাজার থেকে পশ্চিম করমডাঙ্গা গ্রামের মৃত আবদুস সালামের ছেলে পেশাদার ডাকাত শফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। 

তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে (শফিকুল) বগুড়ার প্রধান ডাকঘরে হত্যা ও ডাকাতির কথা স্বীকার করে। তার কাছে ছয়টি মোবাইল ফোন, ডাকাতির সময় পরিহিত শার্ট, প্যান্ট, জুতা ও ব্রেসলেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ নয়টি মামলা রয়েছে। 

পেশাদার অপরাধী শফিকুল ২০১৯ সালে ঢাকার বনানী এলাকায় জনতা ব্যাংকের ভল্ট কেটে টাকা লুটের সময় ধরা পড়েছিল। দেশের বিভিন্ন এলাকায় দোকানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভারতেও ডাকাতি ও ছিনতাই কাজে জড়িয়ে জেল খেটেছে।

শফিকুল ইসলাম পোশাক বানাতে গত ১২ মার্চ মোটরসাইকেলে নওগাঁ থেকে বগুড়ায় আসে। তার মোটরসাইকেলটি পার্কিং করতে গিয়ে প্রধান ডাকঘরে লেনদেন দেখে ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিতরে ঢুকে ভল্ট রুম, সিসি ক্যামেরার অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করে। 

১৫ মার্চ আবারো বগুড়ায় এসে নিউমার্কেট থেকে হ্যান্ডগ্লাভস, ট্রাউজার, গেঞ্জি ও সদর থানার পেছনে বাবু মেশিনারিজ থেকে গ্রিল/ভোল্ট কাটার যন্ত্রপাতি ও একখণ্ড এসএস পাইপ কেনে। টাকা শেষ হওয়ায় ওই দিন শহরতলির তিনমাথা এলাকায় ইসলামী ব্যাংকের বুথ থেকে ১৫ হাজার টাকা তোলে। ডাকাতির জন্য কেনা মালামাল নিয়ে বাড়িতে ফিরে যায়।

পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে শফিকুল ইসলাম গত ২০ এপ্রিল আবারো বগুড়ায় আসে। মধ্যরাতে পোস্ট অফিসের দেওয়াল ডিঙিয়ে ভেতরে ঢুকে এক কোনায় অপেক্ষা করতে থাকে। পরদিন সকালে প্রহরী ওয়াশ রুমে গেলে শফিকুল তার যন্ত্রপাতির ব্যাগ নিয়ে ভিতরে ঢোকে ও সিঁড়ি ঘরে লুকিয়ে থাকে। 

বেলা সোয়া ১টার দিকে প্রহরী ওয়াশরুমে গেলে সে ভল্ট রুমের দিকে যায় এবং জানালার গ্রিল ভেঙে ভল্ট রুমে ঢুকে পড়ে। সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর ভল্ট কাটলেও টাকার বাক্স দূরে থাকায় নিতে ব্যর্থ হয়। পরে সবকিছু রেখে সন্ধ্যার দিকে মূলগেট টপকে বের হয়ে নওগাঁর ভাড়া বাসায় চলে যায়। 

একদিন পর রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। পরদিন ঈদের নামাজ আদায় করে বাড়িতে অবস্থান করে। ঈদের পরদিন ২৩ এপ্রিল বিকালে মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে নওগাঁ শহরের ভাড়া বাসায় আসে। 

মোটরসাইকেল গ্যারেজে রেখে রাত ৯টার দিকে বাসে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাস থেকে চারমাথায় নামার পর সিএনজি অটোরিকশায় শহরের সাতমাথায় আসে। মধ্যরাত পর্যন্ত ডাকঘরের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। 

রাত ২টার দিকে পেছনে চায়ের দোকানের পাশ দিয়ে দেওয়াল ডিঙিয়ে ডাকঘরের ভিতরে ঢোকে। গেট লাগানো থাকায় কাটার দিয়ে বারান্দার গ্রিলের দুটি পাতি ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। 

ডাকঘরের প্রহরী জেগে থাকায় শফিকুল ঘণ্টাখানেক কার্টন ও বস্তার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। এ সময় সতর্কতার সঙ্গে সিসিটিভি ক্যামেরা ঘুরিয়ে দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে সুযোগ বুঝে ভল্ট রুমে চলে যায়।

টাকার বাক্স কাছে নিয়ে আসার জন্য অন্য ২/৩টি রুমের তালা কেটে একটি লম্বা রড জোগাড় করে আনে। রুমের তালা কাটার শব্দে প্রহরী প্রশান্ত কুমার আচার্য্য জেগে গিয়ে শফিকুলকে ধরে ফেলেন। তখন তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। 

একপর্যায়ে শফিকুল ইসলাম এসএস পাইপ দিয়ে প্রশান্তের মাথায় আঘাত ও গলা চেপে ধরে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রশান্ত মারা যান। শফিকুল পুনরায় ভল্ট রুমে গিয়ে ওই রড দিয়ে টাকার বাক্স কাছে আনে। এরপর আট লাখ টাকা ব্যাগে তুলে নেয়। 

শফিকুল পরদিন সকাল ৭টার দিকে নিহত প্রহরী প্রশান্তের পকেটে থাকা গেটের চাবি বের করে নিয়ে ভেতরের ও মূল গেটের তালা খুলে বের হয়ে যায়। ওই সময় বাহির থেকে মূলগেটে তালা দিয়ে যায়। সাতমাথা জিরোপয়েন্ট থেকে অটোরিকশায় চারমাথায় যায়। সেখান থেকে বাসে নওগাঁ পৌঁছায়।

পুলিশ সুপার আরও জানান, শফিকুল ইসলাম নওগাঁ সদরে গিয়ে জলিল মার্কেটের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে তার হিসাবে দুই লাখ ও ডাচবাংলা ব্যাংকে তিন লাখ ৭৬ হাজার টাকা জমা রেখে নওগাঁর ভাড়া বাসায় যায়। পরে গ্যারেজে রাখা তার মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামের বাড়ি সাপাহারে চলে যায়।

বগুড়া ডিবি পুলিশের এসআই মজিবর রহমান জানান, স্বীকারোক্তি রেকর্ডের জন্য ডাকাত শফিকুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার বিকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম