জামাত শুরুর আগেই জনসমুদ্র, আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত শোলাকিয়া
কিশোরগঞ্জ ব্যুরো
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:২১ পিএম
এবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে স্মরণকালের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের বাঁধভাঙা ঢলে জামাত শুরুর আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। জামাতের পরিধি ঈদগাহ ময়দানের আশপাশের রাস্তা-ঘাট এবং বাড়ি-ঘর ছাপিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
উপমহাদেশের বৃহত্তম এ ঈদের জামাতের মোনাজাতের সময় আমিন, আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে আশপাশের এলাকা। সব প্রকার রোগ-বালাই ও অশান্তি থেকে মুক্তিসহ জাতীয় অগ্রগতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে এ ঐতিহাসিক জামাতে মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ কর্তৃক রেওয়াজ অনুযায়ী ১০ মিনিট পূর্বে শটগানের গুলি ছুঁড়ে সঙ্কেত জানানোর মাধ্যমে জামাতের সূচনা হয়।
২০১৬ সালের ঈদুল ফিতরের জামাতের একটি শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশ পথে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকিতে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় দুই পুলিশ কনস্টেবল, মুসল্লি ও প্রতিবেশী এক নারী নিহত হন। আহত হন ১৬-১৭ জন। সেই কলঙ্কজনক অধ্যায়কে সামনে রেখে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চার স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এমন বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার ঘটনাও পরবর্তীতে ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানের লোকসমাগমে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তবে করোনা অতিমারির কারণে দুই বছর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। বরাবরের মতো এবারো মুসল্লিদের সুবিধার্থে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে সকাল-দুপুর আসা-যাওয়া করে দুটি স্পেশাল ট্রেন।
বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রসিদ্ধ কিশোরগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এ ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানটিতে প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের জামাতে দেশ-বিদেশের সাড়ে তিন লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নামাজ আদায় করে থাকেন। তবে এবারের এ ঈদুল ফিতরের জামাতে মুসল্লিদের উপস্থিতি পাঁচ লাখও ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ইসলামের ঐশী প্রচারের উদ্দেশ্যে সুদূর ইয়ামেন থেকে এদেশে আগত স্থানীয় সাহেব বাড়ির পূর্ব পুরুষ আধ্যাত্মিক সাধক সূফী সৈয়দ আহমেদ ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে এ ঈদগাহ ময়দানটি প্রতিষ্ঠা করেন। কিশোরগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে নরসুন্দা নদীর পাড়ে ইসলামের ঐশী বাণী ও ধর্ম প্রচারক কর্তৃক এমন বিশাল ঈদগাহ ময়দান প্রতিষ্ঠার খবর এক সময় চারদিকে এমনকি দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ে। আর তাই প্রতি বছরই গাণিতিক হারে বাড়তে থাকে এ ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানের মুসল্লিদের সংখ্যা।
কথিত আছে, ঈদগাহ ময়দানের প্রতিষ্ঠাতা ধর্মপ্রচারক আধ্যাত্মিক সাধক নিজেই ঈদের জামাতে ইমামতি করতেন। তার ইমামতিতে অনুষ্ঠিত এক ঈদুল ফিতরের জামাতে কাতার গুণে ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লির উপস্থিতি মিলে। তখন থেকে এ ঈদগাহ ময়দানটিকে সোয়া লাখিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসেবে লোকজন ডাকতে শুরু করেন। পরবর্তীতে উচ্চারণ বিবর্তনে এ ঈদগাহ ময়দানের নাম শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসেবেই সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠে। আর তখন থেকেই এ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের লাখ-লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ছুটে আসতে থাকেন।
জনশ্রুতি আছে, এক শ্রেণির ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মনে করেন, লাখো মুসল্লির সঙ্গে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে পরপর তিনবার ঈদুল ফিতরের জামাত আদায় করতে পারলে এক হজ্জের সমান সওয়াব হয়। এ শ্রেণির ধর্মান্ধ মানুষের কাছে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটি গরিবের মক্কা হিসেবেও পরিচিত।
এবার এ ঈদগাহ ময়দানের ১৯৬ তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আর এ জামাতে সমাগত লাখ-লাখ মুসল্লির সঙ্গে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এমএ আফজলসহ শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য লোকজনও অংশ নেন।