বগুড়ার ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ২২১ বস্তা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ না করে গুদামে ফেলে রেখে নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলায় বদলি হওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বস্তাগুলো উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে পাঠানোর সময় ঘটনাটি জানাজানি হয়। 

তবে ইউএনও অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, খাদ্য সামগ্রীগুলো দুর্যোগকালে বিতরণের। গত ৮ মাস আগে বরাদ্দ পাওয়ার পর গুদামে থাকা ১০-১৫টি বস্তা ইঁদুর কেটেছে। জাতীয় একটি দৈনিকের ধুনট উপজেলা প্রতিনিধিকে অন্যায়ভাবে জলমহাল বরাদ্দ না দেওয়ায় তিনি মিথ্যাচার করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাই খোকন বলেন, এটা বিদায়ী ইউএনওর বিরুদ্ধে কতিপয় সাংবাদিকের ষড়যন্ত্র।

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২০২১ সালের ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের খাদ্য সামগ্রী বিভিন্ন জেলায় পাঠায়। ঝড়, বজ্রপাত, অগ্নিকাণ্ড ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য ২০২২ সালের ২৫ জুলাই ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৫০০ বস্তা খাদ্য সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়। 

ওই বছরের ৪ আগস্ট বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরিত্যক্ত বাড়িতে (ত্রাণের অস্থায়ী গুদাম) পৌঁছে। সাড়ে ১৫ কেজি ওজনের প্রতিটি বস্তায় চাল, ডাল, লবণ, তেল, চিড়া, নুডলস, চিনি, হলু, মরিচ ও ধনিয়া গুঁড়া মসলা রয়েছে। 

বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের পর গুদামে ২২১ বস্তা খাদ্য সামগ্রী অবশিষ্ট থাকে। নতুন করে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় গত ৮ মাস আগে বরাদ্দ পাওয়া খাদ্য সামগ্রীগুলো কিছুদিন গুদামে পড়ে ছিল।

সূত্রটি আরও জানায়, ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্তকে গত ৭ মার্চ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বদলি করা হয়। উপজেলা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ইউএনও গত বৃহস্পতিবার বিকালে অবশিষ্ট ২২১ বস্তা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের খাদ্য সামগ্রী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাই খোকনের সরকারি বাসভবনে পাঠিয়ে দেন। 

এ সময় ইঁদুরে কাটা ১০-১৫টি বস্তা পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের খাদ্য সামগ্রী ৮ মাস আগে ধুনটে পৌঁছলেও স্থানীয় মহল বিষয়টি দেখে প্রচারণা চালায়, ইউএনও খাবারগুলো বিতরণ না করে দুবছর ফেলে রাখায় নষ্ট হয়ে গেছে। এমন প্রচারণায় সাধারণ জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাই খোকন বলেন, খাদ্য সামগ্রীগুলো দুর্যোগকালে বিতরণের। দুর্যোগ না হওয়ায় ২২১ বস্তা খাদ্য ইউএনওর পরিত্যক্ত বাসভবনে (অস্থায়ী ত্রাণ গুদাম) ছিল। সেখানে ইঁদুর ১০-১৫ বস্তা কেটে ফেলে। অবশিষ্ট খাদ্য সামগ্রী ভালো রয়েছে। আগামীতে কোনো দুর্যোগে খাদ্যগুলো বিতরণ করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত ২০২২ সালের ২৬ মার্চ উপজেলা মুজিব চত্বরের পুকুরে ১৬০ ফুট লম্বা ও ৯৬ ফুট চওড়া ‘জলতরঙ্গে বিজয় নিশান’ করে শুধু বগুড়ায় নয়; সারাদেশে সাড়া ফেলেন। তিনি উপজেলার অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশ নেন। কিছু সাংবাদিক ব্যক্তিগত ঈর্ষার কারণে বিদায়কালে তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। তিনি এ ব্যাপারে সঠিক তদন্ত দাবি করেন।