চাঁদার দাবিতে ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে যবিপ্রবির শিক্ষার্থীকে নির্যাতন
যশোর ব্যুরো
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:১২ পিএম
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে ইসমাইল হোসেন নামে এক ছাত্রকে ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিয়ুর রহমান হলের ৫২৮ নাম্বার কক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ইসমাইল ময়মনসিংহ জেলার বলারামপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি যবিপ্রবির পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
অভিযুক্ত যবিপ্রবির কম্পিউটার ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সালমান এম রহমান ও একই বিভাগের সদ্য বহিষ্কারকৃত শিক্ষার্থী সোয়েব আলীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্ত কমিটি গঠন, মামলা দায়ের ও ভিকটিমের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, অভিযুক্ত দুইজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্টকে থানায় মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রভোস্ট বডি আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিবে। এছাড়াও নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইসমাইল হোসেন জানান, যশোর শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে একটি ছাত্রাবাসে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন কম্পিউটার ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোয়েব আলী ও সালমান এম রহমান। ইসমাইল দিতে অস্বীকার করলে রোববার দুপুরে ডিপার্টমেন্টে ক্লাস চলাকালীন সোয়েব ও সালমান তাকে ডেকে হলে নিয়ে যায়। এর দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তাকে বেঁধে রেখে রড, পাইপ আর বেল্ট দিয়ে অমানষিক নির্যাতন করে। পরে সন্ধ্যায় সহপাঠীরা উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরে রাতে অবস্থা অবনতি হলে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিপিটি বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী আল জুবায়ের রনি জানান, ইসমাইল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। রোববার দুপুরের পর থেকে ইসমাইলকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি তার ফোনও বন্ধ ছিল। সে রোজা ছিল, ইফতারের সময় ইসমাইলকে না পাওয়ায় অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়।
ওর সহপাঠীরা জানান- হলের সালমান আর সোহেব ক্লাস চলাকালে ডেকে নিয়ে গেছিল, তারপর আর খোঁজ নেই ইসমাইলের। পরে আমরা সবাই হলে যেয়ে খুঁজে দেখি ৫২৮ নম্বর কক্ষে অসচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রথমে ক্যাম্পাসে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়াতে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষটি ছয়জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও ছাত্রলীগকর্মী সোয়েব আর সালমান দুজনই থাকতেন। এমনকি গাঁজা সেবন ও ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা করার দায়ে সোয়েব বহিষ্কার হওয়ার পরেও ছাত্রলীগের প্রভাবে হলে নিয়মিত বাসিন্দা তিনি। এমনকি এর আগেও এই দুজনের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রদের শিবির উপাধি দিয়ে চাঁদা দাবি করারও অভিযোগ তুলেছে সাধারণ শিক্ষার্থী। তারা দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, যবিপ্রবি ছাত্রলীগে সভাপতি-সম্পাদকের আলাদা কোনো গ্রুপ নেই। ফলে আমার অনুসারী হওয়ার সুযোগও নাই। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা ছাত্রলীগের কোনো পদে নেই। তারা কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগের মিটিং মিছিলে অংশ নিতে পারে। একজন কর্মী অপরাধ করলে তার দায় তো সংগঠন বহন করবে না।
সোমবার এক নোটিশে শহীদ মশিয়ুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ জানান, অভিযুক্ত সোয়েব আলী ও সালমান এম রহমানকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে রোববার রাতে শহীদ মশিয়ুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। ভর্তি করার আগে তার মুখ দিয়ে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছি। ইসমাইলের ভাষ্য- চাঁদার দাবিতে তাকে আটকে রেখে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্যাতন চালানো হয়েছে। আমরা নির্যাতনের কক্ষটি সিলগালা করে দিয়েছি।