রিকশা চালিয়ে লেখাপড়া করা মমিনুর এখন প্রভাষক
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:১৮ পিএম
অদম্য মেধাবী মমিনুর ইসলাম। বাবা দিনমজুর। অর্থনৈতিক সংকট পড়াশোনার খরচ জোগাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দারিদ্র্যতার এ বাধা অতিক্রম করেছেন মমিনুর। পড়াশোনার খরচ জোগাতে দিনমজুরের কাজ ও রিকশা চালিয়েছেন তিনি। নিজের যোগ্যতায় প্রভাষক পদে চাকরি পেয়েছেন। ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সারাদেশে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন মমিনুর। এ কারণে চলতি বছর তিনি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক (এনটিআরসি) কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদ্রাসায় ইংরেজি বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এখন স্বপ্ন দেখেন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। এ জন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে মমিনুর।
সংগ্রামী এই যুবকের বাড়ি সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্যেকুমরপুরের সফপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মো. নুর ইসলাম ও মা ময়না বেগম। তিন ভাই-বোনের মধ্যে মমিনুর সবার বড়।
২০০৯ সালে সদরের মধ্যেকুমরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও ২০১১ সালে নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মমিনুর রহমান খেত-খামারে কাজ ও রিকশা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করে ভর্তি হয়েছিলেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের স্নাতক শ্রেণিতে। তিনি ইংরেজি বিষয়ে প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত আর্থিক সংকটে পড়েন। বার বার ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালিয়ে পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন।
দারিদ্র্যতার কারণে দফায় দফায় পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও দৃঢ় মনোবল আর পরিশ্রম করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি। আর পড়াশোনা শেষে সংগ্রামী এই যুবক জেলা শহরের আলিয়া মাদ্রাসায় প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। রিকশাচালক থেকে তিনি এখন ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক। ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সারাদেশে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন মমিনুর। এ বছর ১০ মার্চ কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন তিনি। মমিনুরের সফলতার গল্প কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। তার সাফল্যে খুশি স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে কথা হয় মমিনুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি যখন এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই; প্রাইভেট পড়ার জন্য স্যারের বাড়িতে যাব তার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তখন আমি মায়ের কাছে কান্নাকাটি করি। তখন নানার বাড়ি থেকে একটা পুরাতন সাইকেল পাই। তা দিয়ে প্রাইভেটে যেতাম। কিন্তু স্যারদের বেতন দিতে পারি নাই। অনেক কষ্ট করে এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হই কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে। আমার মনে আছে অন্যের জামাকাপড় পড়ে কলেজ গিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, অনার্স পড়ার সময় কতবার যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে গিয়েছি রিকশা চালাতে; তার কোনো হিসাব নেই। এ ছাড়াও কুমিল্লাও গেছি কাজের সন্ধানে।
প্রভাষক মমিনুর বলেন, আমি ভাবি যদি প্রভাষক হতে পারি বিসিএস ক্যাডারও হতে পারব।
মমিনুরের বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাতাম। ছেলে এইচএসসি পাস করার পর থাকে আর একটি টাকাও খরচ দিতে পারি নাই। ছেলে নিজে দিনমজুরের কাজ ও ঢাকায় রিকশা চালিয়ে পড়াশোনা করেছে। তার ফল আজ সে পাইছে। আমি অনেক খুশি। আল্লাহ রহমত করছে।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, মমিনুর রহমান শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় মেধাতালিকায় তৃতীয় অবস্থান করে এখন ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছে। সে আমাদের কলেজের ছাত্র। সে শিক্ষা জীবনে রিকশা চালিয়ে পড়াশোনা করেছে। আমাদের কলেজের পক্ষ থেকে যেটুকু পারছি সহযোগিতা করেছি আমরা।