Logo
Logo
×

সারাদেশ

২৪ বছর কারাভোগের পর নতুন জীবনে জাহাঙ্গীর 

Icon

তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৯ পিএম

২৪ বছর কারাভোগের পর নতুন জীবনে জাহাঙ্গীর 

স্ত্রী হত্যার দায়ে ২৪ বছর আড়াই মাস কারাভোগ শেষে গত জানুয়ারি মাসে মুক্ত হন লক্ষ্মীপুরের জাহাঙ্গীর আলম। তবে কারাগারে থাকাকালে কম্পিউটার প্রশিক্ষণে কৃতিত্ব দেখিয়ে সবার নজরে চলে আসেন জাহাঙ্গীর। এখন তিনি নতুন জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছেন।

কারাগার শাস্তির স্থান নয়, সংশোধনাগার। এখানে নতুন জীবন গঠনে বন্দিদের বিভিন্ন ধরনের কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কারামুক্ত হয়ে প্রশিক্ষণ অনুযায়ী কাজ করে নতুন জীবনের সূচনা করেছেন অনেকেই। আবার কারাগারে প্রশিক্ষণকালে কাজের দক্ষতা, আচার-আচরণে মুগ্ধতা ছড়াতে পারলেই মিলছে সরকারি সহায়তাও। তেমনি সরকারি সহায়তা পেয়ে কম্পিউটার দোকানে নতুন জীবনের সূচনা করেছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের জাহাঙ্গীর আলম।

জাহাঙ্গীর সদর উপজেলার উত্তর মহাদেবপুর গ্রামের মো. মজিবুল হকের ছেলে। স্ত্রী হত্যার দায়ে তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২৪ বছর আড়াই মাস কারাবন্দি ছিলেন। কারাগারে কম্পিউটার প্রশিক্ষণে জীবনকে নতুন করে সাজানোর লক্ষ্যে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। সরকারি সহায়তায় তাকে ১টি কম্পিউটার দোকান উপহার দেওয়া হয়।

কারা সূত্র জানায়, স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে হত্যার দায়ে ১৯৯৮ সালের ১৬ অক্টোবর কারাবন্দি হন জাহাঙ্গীর। ২০০১ সালে লক্ষ্মীপুর জজ আদালত স্ত্রী হত্যার দায়ে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করলে রায় সংশোধন করে বিচারক তার যাবজ্জীবন দেন।

২৪ বছর আড়াই মাস কারাভোগ শেষে তিনি গত জানুয়ারি মাসে মুক্ত হন। তবে কারাবন্দি থাকাকালে কম্পিউটার প্রশিক্ষণে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন জাহাঙ্গীর। 

কারা পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক জানিয়েছিলেন, পদ্মাসেতুর গ্রাফিক্সটি অসাধারণ হয়েছে। এটি নতুন জীবন গঠনে জাহাঙ্গীরের জন্য এটি নবসূচনা হতে পারে। এ সময় সঙ্গে থাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম পাটওয়ারীকে বিষয়টি নিয়ে বিবেচনার জন্য বলেন জেলা প্রশাসক। সে লক্ষ্যেই জাহাঙ্গীর কারামুক্ত হওয়ার পর সমাজসেবা অধিদপ্তরের অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির আওতায় কম্পিউটারের দোকানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, অপরাধীদের সংশোধনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির আওতায় জাহাঙ্গীরকে কম্পিউটার দোকান ব্যবস্থা করেছে।

বুধবার রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাখালিয়া বাজারে জাহাঙ্গীরের বিসমিল্লাহ টেলিকম অ্যান্ড ফটোশপ দোকানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ। 

এরআগে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর যাবজ্জীবন সাজা শেষে মিলন কামাল নামে একজনকে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ গ্রামে আবদুল্লাহপুর গ্রামে সেলুন দোকান উপহার দেওয়া হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, যেদিন বিচারক আমাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন, সেদিনই আমি মরে গেছি। আল্লাহ রহম করায় আমি বেঁচে আছি। পরে আপিল করলে উচ্চ আদালত আমার যাবজ্জীবন দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, আমি অপরাধের সাজা পেয়েছি। কারাগারে থাকাকালে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছি। সরকার আমাকে একটি কম্পিউটার দোকান উপহার দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাকি জীবন ভালোভাবে কাটাতে চাই।

জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, কারাগার শাস্তির স্থান নয়। কারাগার এখন সংশোধনাগার। কারাগারে বন্দিরা নিজেদেরকে সংশোধন করতে কাজ করছেন। লক্ষ্মীপুরে এ নিয়ে কারামুক্ত দুই ব্যক্তিকে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে জীবনকে নতুন করে সাজানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি জাহাঙ্গীরের ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল হবে। 

জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কারাগারে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও জীবিকা নির্বাহের জন্য সরঞ্জামাদি দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম