পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল হস্তান্তর, অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত
যুগান্তর প্রতিবেদন ও পায়রা বন্দর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৩, ১০:২৯ পিএম
বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ড্রেজিং স্কিম পায়রা বন্দরের ‘রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং’ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়িত এ কাজটি বেলজিয়াম ভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জান ডে নুল সম্পন্ন করে।
রোববার পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে বেলজিয়াম ভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জান ডে নুল আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের গভীরতম এ চ্যানেল হস্তান্তর করে।
পায়রা বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আজিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এতে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, পায়রা বন্দরের চ্যানেলের গভীরতা ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ৭৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১১০ থেকে ২০০ মিটার। পায়রা বন্দর বর্তমানে দেশের গভীরতম বন্দরে রূপান্তরিত হয়েছে। এর ফলে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩২ দশমিক ২ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট বড় আকৃতির জাহাজ ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য নিয়ে সরাসরি পায়রা বন্দরে ভিড়তে পারবে।
এদিকে চ্যানেল হস্তান্তর উপলক্ষে ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় পায়রা বন্দরের সভাকক্ষে বন্দর কর্তৃক একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এতে উপস্থিত ছিলেন- স্কিম পরিচালক কমডোর রাজীব ত্রিপুরা, জান ডে নুল এর প্রকল্প পরিচালক ইয়াং মনস, পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিবসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক।
সংবাদ সম্মেলনে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেনেন্স ড্রেজিং প্রকল্পটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে বড় প্রকল্প, যা পায়রা বন্দর সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। বন্দরের এই সক্ষমতার মাধ্যমে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের আগামী মে মাসে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল উদ্বোধন করার সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। টার্মিনালটি চালু হলে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। বন্দরের রাজস্ব আয় বাড়বে। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চ্যানেলের নাব্য ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত হওয়ার ফলে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে খাদ্যশস্য, সার, আমদানিকৃত গাড়ি ও অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নগরী ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে পণ্য পরিবহণে খরচ ও সময় উভয়ই সাশ্রয় হবে।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ড্রেজিংয়ের ফলে বড় বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরে আনয়নপূর্বক আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি করতে দক্ষিণাঞ্চলকে অর্থনীতির মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং দেশের জিডিপি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
জান ডে নুলের প্রকল্প পরিচালক ইয়াং মনস বলেন, বাংলাদেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রার ক্যাপিটাল ও মেইনটেনেন্স প্রেজিংয়ের কাজে সরাসরিভাবে যুক্ত হতে পারা জান ডে নুলের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এই প্রকল্পে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের চ্যানেল সাফল্যজনকভাবে খনন শেষ করে আজ খুবই আনন্দিত।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মুহিব বলেন, ক্যাপিটাল প্রেজিং শেষ হবার ফলে পায়রা বন্দর বিশ্বের একটি শ্রেষ্ঠ বন্দরে পরিণত হয়েছে। এই বন্দরের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটবে।