পাওনা টাকা আদায়ে ছেলেকে শেকলে বেঁধে নির্যাতন
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৩, ১০:০৫ পিএম
নাটোরের গুরুদাসপুরে বাবার কাছে পাওনা টাকা আদায় করতে শাওন ইসলাম (১৩) নামে এক কিশোরকে শেকলে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
শনিবার এ ঘটনায় গুরুদাসপুর থানায় শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হলেও আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের চলনালি গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ২টার দিকে পুলিশের সহায়তায় নির্যাতনের শিকার কিশোরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শামীমা আফরোজ জানান, শাওনের বাম পায়ে জখমের চিহ্ন রয়েছে, তার চিকিৎসা চলছে।
এ ঘটনায় শাওনের মা আরজিনা বেগম মুন্নাফ হোসেনকে অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
নির্যাতনের শিকার শাওনের বাবার নাম কাবিল হোসেন। তার বাড়ি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গরামপুর গ্রামে। উপজেলার চলনালি গ্রামের মুন্নাফ হোসেনের পাঁচ বিঘা জমি বছর চুক্তিতে লিজ নিয়ে সেখানে পেয়ারার বাগান করেছেন। শুক্রবার সকালে লিজ নেওয়া ওই বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করতে এলে শাওনকে ধরে মুন্নাফ তার বাড়িতে নিয়ে যান।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাওন জানায়, মুন্নাফ ও তার ভাতিজারা জোর জবরদস্তি করে তাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বাম পায়ে শেকল বেঁধে তাকে চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারতে থাকেন। এভাবে সকাল ৭টা থেকে পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত (দুপুর ২টা) বেঁধে রেখে থেমে থেমে নির্যাতন করা হয় তাকে।
শাওনের মা আরজিনা বেগম জানান, বেলা ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে ছেলেকে উদ্ধারের জন্য মুন্নাফের বাড়িতে যান তিনি। কিন্তু ছেলেকে ছেড়ে না দিয়ে তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন মুন্নাফ ও তার ভাতিজারা। নিরুপায় হয়ে পুলিশের আশ্রয় নেন তিনি। পরে দুপুর ২টার দিকে পুলিশের সহায়তায় ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ওই কিশোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ছেলে নির্যাতনকারীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
ছেলেকে নির্যাতনের ঘটনাটি অমানবিক দাবি করে শাওনের বাবা কাবিল হোসেন দাবি করে বলেন, ‘অভিযুক্ত মুন্নাফের কাছ থেকে বিঘাপ্রতি ১৭ হাজার টাকা বছর চুক্তিতে পাঁচ বিঘা জমি পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলেন তিনি। দুই বছর ফলন বিপর্যয়ের কারণে এক বছরের টাকা পরিশোধে দেরি হয়েছে। বকেয়া টাকা পেতেই তার ছেলেকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।’
এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
নির্যাতনের ঘটনাটি অস্বীকার করে মুন্নাফ হোসেন বলেন,‘জমি লিজের টাকা পরিশোধ না করে টালবাহানা করছেন কাবিল হোসেন। সকালে বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করতে এলে তার ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছিল। তবে নির্যাতন করা হয়নি।’
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন বলেন, ‘শিশু নির্যাতনে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামিকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ খুঁজছে।’
দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।