Logo
Logo
×

সারাদেশ

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল প্রকৌশলী জাহিদের মা

Icon

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম (নাটোর) 

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫১ পিএম

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল প্রকৌশলী জাহিদের মা

‘বিটা কইছিল, মা রে, আমি ঈদের মধ্যে আইসি তোমাক দেখপো। কিন্তুক ছাওয়ালের মুক আমার আর দেকা হইলো না। বন্ধুর ডাকে পঞ্চগড়ে জলসা শুনতে গেলো, এখন শুনি আমার ছাওয়াল আর নাই। আমার ছাওয়ালের কোনো রিপোর্ট নাই। এতো ভালো ছাওয়ালেক কবরে থুইয়ে আমি কি কইরি থাইকপো’। 

বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাতের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত নাটোরের বড়াইগ্রামের নটাবাড়িয়া গ্রামের প্রকৌশলী জাহিদ হাসানের মা জরিনা বেগম। একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে মায়ের এমন আহাজারিতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

জানা গেছে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গীর মোড়ে আহমদিয়া জামাতের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন মুসল্লিরা। পরে এ নিয়ে মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। দফায় দফায় সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রকৌশলী জাহিদ হাসান (২৫) মারা যান। 

তিনি আহমদিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত এবং বিক্ষোভকারীরা তাকে করতোয়া নদীর ধারে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি সালানা জলসার আহবায়ক আহমদ তবশের চৌধুরীর। তবে নিহতের স্বজনদের দাবি, জাহিদ হাসান বা তারা কেউই আহমদিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত নয়।
 
নিহতের চাচাতো ভাই বনপাড়া বিসমিল্লাহ ডায়গনস্টিক সেন্টারের এমডি রেজাউল করিম জানান, নাটোর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও ডিপ্লোমা পাশ করেন জাহিদ। 

পরে তিনি বগুড়া পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে বিএসসি ইন ডিপার্টমেন্ট অব ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ডিগ্রি নেন। এরপর এক বছর যাবৎ জাহিদ ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডে চাকরি নেন।

দরিদ্র কৃষক আবু বকর সিদ্দিকের একমাত্র ছেলে তিনি। তার উপার্জনেই সংসার চলতো। চাকরির পাশাপাশি স্কলারশিপ নিয়ে জাহিদ উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
 
নিহত জাহিদ হাসানের বড় বোন শাকিলা খাতুন জানান, আমার ভাই ঢাকায় চাকরি করেন। বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের এক বন্ধুর আমন্ত্রণে সেখানে জলসায় যোগ দিতে যান। আর বাড়ি থেকে আমার বাবা ও চাচাও সেখানে জলসায় যান।
 
শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে মোবাইলে আমার ভাইকে হত্যার খবর পাই। এ সময় ওই বন্ধুর নাম পরিচয় বারবার জানতে চাইলেও তারা তা প্রকাশ করেননি।
  
নিহতের অপর বোন লিপি খাতুন জানান, আমাদের দুই বোনকে বিয়ে দেয়ার পর কষ্ট করেই বাবা-মা জাহিদকে লেখাপড়া শেখায়। বছরখানেক আগে চাকরি পেয়েছে জাহিদ। তার আয়েই বাবা-মায়ের সংসার চলে। তাকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল পরিবারের। নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।
  
শনিবার বিকালে সরেজমিন দেখা যায়, বাড়িতে কিছু আত্মীয়স্বজন বসে আছেন। কেউ কাঁদছেন, কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তখনো জাহিদের লাশ বাড়িতে এসে পৌঁছেনি। তবে বাড়ির দক্ষিণ দিকে কবর খননের প্রস্তুতি চলছে।
 
মাঝগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আজাদ দুলাল জানান, আমাদের এলাকায় কোনো কাদিয়ানী নেই। তবে এই ছেলে লেখাপড়া করতে গিয়ে কোনোভাবে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে কিনা জানি না। তবে উচ্চশিক্ষিত বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলের এমন মৃত্যু বড়ই বেদনাদায়ক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম