Logo
Logo
×

সারাদেশ

যেভাবে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের ‘ঋণ’ শোধ করছেন রেশমা

Icon

ধামরাই প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৫ পিএম

যেভাবে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের ‘ঋণ’ শোধ করছেন রেশমা

ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের চোখে আলোকিত পৃথিবী দেখছেন ঢাকার ধামরাইয়ের সুয়াপুর এলাকার স্বাস্থ্যকর্মী রেশমা নাসরিন। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনকে স্মরণ করেন রেশমা নাসরিন ও তার পরিবার।

আব্দুল মতিন মরেও যেন বেঁচে আছেন ধামরাইয়ের সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী রেশমা নাসরিনের মাঝে। তার দান করা চোখের কর্নিয়ায় নিভে যাওয়া চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন রেশমা নাসরিন। এখন তিনি  আলোকিত পৃথিবী দেখছেন। মতিনের চোখের আলোয় আলোকিত হয়ে করছেন স্বাস্থ্যসেবা। রেশমার মাঝে চির অমর হয়ে রয়েছেন এ মহান ভাষা সৈনিক।

১৯৫২ সালে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিলেন ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন। এছাড়া সারা জীবন মানুষের পাশে থেকে মানুষের সেবা করে গেছেন তিনি। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন তিনি। কিন্তু তার দান করে যাওয়া চোখে এখন আলোকিত পৃথিবী দেখছেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেকের মেয়ে ও সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী রেশমা নাসরিন।

তাই ২১ ফেব্রুয়ারি আসলেই রেশমা নাসরিন তথা ধামরাইবাসীর হৃদয়ে নাড়া পড়ে যায় সেই ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের কথা।

রেশমা নাসরিন (৩০) ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনের মতো মহান মানুষের অনুগ্রহ ও করুণা পেয়ে গর্বিত ও ধন্য। আবদুল মতিনের দান করে যাওয়া দুটি চোখের কর্নিয়ার মধ্যে একটি স্থাপন করা হয়েছে রেশমা নাসরিনের চোখে। জন্মগতভাবে চোখের সমস্যা নিয়ে ২৪ বছর অতিবাহিত করার পর আবদুল মতিনের চোখের কর্নিয়ায় জীবনের ছন্দ ফিরে পেয়েছেন রেশমা নাসরিন।

তিনি জানান, জন্মের পর আমার চোখের সমস্যা দেখা দেয়। আট বছর বয়স থেকে সমস্যা প্রকট হতে থাকে। অভাবের সংসারে চোখের সমস্যা নিয়ে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাই। ২০১৩ সালে ধামরাই সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হই। ওই বছর আমার চোখের আলো পুরোপুরি নিভে যায়। দিশেহারা হয়ে আমি চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরতে থাকি। এক পর্যায়ে ঢাকার সেন্ট্রাল চক্ষু হাসপাতালের একদল চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাকে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। কিন্তু ব্যয়বহুল এ কাজটি আমার পরিবারের পক্ষে করা মোটেও সম্ভব ছিল না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর মারা যান ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন। গণমাধ্যমের সুবাদে রেশমা আবদুল মতিনের কর্নিয়া দানের বিষয়টি জানতে পারেন। সেই দিনই তিনি যোগাযোগ করেন সন্ধানীর চক্ষু হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারা তাকে পর দিন সেখানে যেতে বলেন।

ওই বছরের ৯ অক্টোবর বিকাল ৪টার দিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সৈনিক আবদুল মতিনের চোখের কর্নিয়া রেশমার চোখে স্থাপন করা হয়। এতে তার খরচ হয় মাত্র ১৫ হাজার টাকা। ফিরে পায় রেশমার চোখের আলো দেখতে শুরু করে সুন্দর পৃথিবীটাকে আনন্দে ভরে উঠে রেশমার মন।

বর্তমানে রেশমা মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ও ছেলে রায়হান বিন আয়ানকে নিয়ে ভালো আছেন। ছেলে মেয়েকে মানুষ করার সঙ্গে রেশমা আবার নিজ গ্রাম শিয়ালকোল একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি করে অসহায় মানুষের সহযোগিতা করেন। রেশমা নাসরিন পেশায় সুয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী।

আবদুল মতিনের দান করা কর্নিয়ায় চোখের আলো ফিরে পেয়ে মানুষের সেবায় ব্রত হয়েছেন তিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গদান করায় জন্য। এভাবে মানুষের উপকার করে আবদুল মতিনের ঋণ কিছুটা হলে ও শোধ করতে চান তিনি।

এ ব্যাপারে রেশমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেক বলেন, আমি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনকে আল্লাহ যেন বেহেস্ত নসীব করেন। কারণ আজ আমার মেয়ে রেশমা চোখের আলো ফিরে পেয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম