Logo
Logo
×

সারাদেশ

জরাজীর্ণ শহিদ রফিকের মায়ের কবর সংরক্ষণের দাবি

Icon

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:৫০ পিএম

জরাজীর্ণ শহিদ রফিকের মায়ের কবর সংরক্ষণের দাবি

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে প্রথম সিংগাইরের পারিল গ্রামের সন্তান শহিদ রফিকউদ্দিন আহমেদ। শহিদ রফিকের মা রোফেজা খাতুন ১৯৮৯ সালে মৃত্যুবরণ করায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে মানিকগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র দেবেন্দ্র কলেজের সামনের খালপাড়ে।

তার মায়ের কবরটি একটি বিরোধপূর্ণ স্থানটিতে রয়েছে। এদিকে শহরের প্রাণকেন্দ্রে শহিদ রফিকের মায়ের কবর থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দাসহ অল্পসংখ্যক মানুষ জানলেও বাকি সবার এখনো অজানাই রফিকের মায়ের কবর কোথায়!

ভাষার জন্য জীবনদানকারী প্রথম শহিদ রফিকউদ্দিন আহমেদ রফিকের মায়ের কবরটি রাস্তার ধারে বড়ই অযত্ন-অবহেলায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই কবরটি সংস্কার ও সংরক্ষণের!

শহিদ রফিকের ছোট ভাই বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. খোরশেদ আলমের দাবি— কবরটির জায়গা নিয়ে দেবেন্দ্র কলেজের সঙ্গে তাদের বিরোধ চলমান রয়েছে। বিষয়টি সুরাহার জন্য একাধিকবার জেলার উচ্চপযায়ে একাধিকবার মিটিং হয়েছে। তবে কোনো বিরোধ ফয়সালা হয়নি।

ফলে এখানে নিজেরাও পারিবারিকভাবে কোনো সংস্কার কিংবা আয়োজন করতে পারি না কোনো কর্মসূচি। ২১ ফেব্রুয়ারির যত অনুষ্ঠান গ্রামের বাড়ি পারিলের রফিকনগরে নানা আয়োজনে পালিত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে ৮৪ বছর বয়সে শহিদ রফিকের মা রোফেজা খাতুন মৃত্যুবরণ করেন। সর্বস্তরের মানুষ সহজে যেন শ্রদ্ধা জানাতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়ি সিংগাইরের পারিলে তার মরদেহ সমাহিত না করে দেবেন্দ্র কলেজের মাঠের দক্ষিণ পাশে সমাহিত করা হয়।

বর্তমানে শ্রদ্ধা জানানো দূরের কথা অনেকেই তা জানেনও না। এখানে সমাহিত রয়েছে ভাষার জন্য জীবনদানকারী রফিকের মাকে। কবরের পাশে জরাজীর্ণ পরিবেশ, নেই কোনো সাইনবোর্ড। ফলে কবরটি কার সাধারণ মানুষ তা জানতেও পারছেন না।

দেবেন্দ্র কলেজ পুড়ুয়া শিক্ষার্থী রুবেল হোসেন বলেন, দেবেন্দ্র কলেজে লেখাপড়া করছি। এই রাস্তা দিয়েই চলাফেরা করি প্রতিদিন। কিন্তু এটি যে ভাষাশহিদ রফিকের মায়ের কবর, তা জানতাম না। আমাদের সহপাঠীর অনেকেরই জানা নেই। আর জানবই বা কি করে? এখানে নেই কোনো সাইনবোর্ড।

জেলা ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু শহিদ রফিককে কোথায় সমাহিত আছেন সেটি আমরা ৭১ বছর পার হওয়ার পর শনাক্ত করতে পারিনি। আর তার মাকে আমরাই মানিকগঞ্জ শহরে সমাহিত করেছি। অথচ দুঃখের বিষয় হলো— মায়ের কবরটি যে স্থানটিতে আর সেখানে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের নিজস্ব সম্পত্তি দাবিকৃত সাইনবোর্ড ঝুলছে।

বিবদমান বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমাঝোতার কবরটি মানসম্মতভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও মনে করেন সাধারণ মানুষ এখানে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগটুকু তৈরি করতে দ্রুত সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।

মানিকগঞ্জ পৌসভার মেয়র রমজান আলী বলেন, শহিদ রফিকের বাড়ি সিংগাইরের পারিলে। তার পরও সর্বস্তরের মানুষ যাতে শহিদ রফিককে স্মরণ করে তার মায়ের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে পারে, সে জন্য শহরের প্রাণকেন্দ্রে সমাহিত করা হয়। দ্রুত কবরটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মো. রেজাউল করিম যুগান্তরকে টেলিফোনে জানান, শহিদ রফিকের মায়ের কবরস্থান সংরক্ষণ নিয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা, জেলা প্ররিষদের চেয়ারম্যানসহ সর্বস্তরের এলাইড পারসন নিয়ে কবরটি সংরক্ষণ নিয়ে সভা হয়েছে। এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা হবে।

তিনি বলেন, জায়গাটি দেবেন্দ্র কলেজের হলেও যেহেতু এখানে সমাহিত আছেন ভাষার জন্য জীবনদানকারী এক শহিদের মায়ের কবর এটি তাদের জন্যও গর্বের। এখন আর এটি কলেজের সম্পত্তি হিসেবে তিনি দেখছেন না।

তবে তিনি জানান, কবরটি সরকারের কোনো দপ্তর এটি সংস্কার কিংবা সংরক্ষণ নাকি কলেজ কর্তৃপক্ষ করবে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও তিনি জানান। তিনি জানান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে দায়িত্ব দিলেও তারা সেটি বাস্তবায়ন করবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম