প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরছেন ভূমিহীনরা
কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:২৭ পিএম
অন্যের বাড়িই যার ভরসা সেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তিন সন্তানের জনক আব্দুল কুদ্দুছ (৫৩) পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার (ঘর ও জমি)। এখন থেকে কুদ্দুছকে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকতে হবে না।
তাকে জমিসহ ঘর করে দেওয়া হয় নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন গ্রামে। সেই এলাকাতেই তিনি এক আত্মীয় বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন।
ঘর পেয়ে কুদ্দুছ যুগান্তরকে বলেন, আমরার কোনো জায়গা-জমি আছিন না। প্রধানমন্ত্রী ঘর দিছে, জমি দিছে। অহন থেইক্কা বউ-ফুলাফাইন লইয়্যা এই ঘরে থাকবাম। এ সময় তিনি আরও বলেন, এই ঘরটা যদি না পাইতাম, জীবনেও এমন ঘর বানাইতাম পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী আমার নামে জমি ও ঘর দিছেন। আমি আল্লাহর কাছে প্রধানমন্ত্রী ও তার বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করি।
বৃহস্পতিবার সকালে যুগান্তর প্রতিবেদকের কাছে এসব কথা বলছিলেন আব্দুল কুদ্দুছ।
তারই মতো আরেক ভিক্ষুক বাহাদুরকান্দা গ্রামের ভূমিহীন সাইকুল মণ্ডল (৪৩)। যার কিনা ঘুম থেকে ওঠেই বের হতে হয় ভিক্ষাবৃত্তির জন্য। চিন্তা করতে হয় বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কিভাবে দুমুঠো খাবেন। সেই ভিক্ষুক সাইকুল পেলেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের জমি ও ঘর।
সাইকুল মণ্ডল ঘর পেয়ে বলেন, যেখানে ভিক্ষা করে তিনবেলা খাবার জুটছিল না তার। সেখানে আবার পাকা ঘর। যেন ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। স্বপ্ন আজ বাস্তবে পরিণত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় এবার নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় জমিসহ ঘরের মালিক হতে যাচ্ছেন আরও ২১১টি উপকারভোগী পরিবার। এর আগে কয়েক দফায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপজেলায় ২৭১টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছিল।
যেসব ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে ইতোমধ্যে তারা বাড়ির আঙিনায় ফুল, ফল ও শাক সবজিতে ভরিয়ে তুলেছেন। তারা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছেন। পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে সামাজিক মর্যাদাও। এখন তাদের ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশুনাও করছে। সমাজের মূলস্রোতে মিশে গিয়েছে ভূমিহীন পরিবারগুলো, হাসি ফুটেছে শত সহস্র ভূমিহীনের মুখে।
বৃহস্পতিবার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নলছাপ্রা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে গুচ্ছাকারে ১২টি আধপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘরের সঙ্গে একটি রান্নাঘর, একটি সংযুক্ত টয়লেট আর ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রাখা হয়েছে। ঘরগুলো সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। সদ্য রং লাগানোয় চকচক করছে ঘরগুলো। বিদ্যুতের তারও লেগেছে। করা হয়েছে পানির ব্যবস্থা।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম যুগান্তরকে বলেন, এ পর্যন্ত উপজেলায় ২৭১টি ঘর নির্মাণ করে উপকারভোগীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ২১১টি ঘরের কাজ ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এই ঘরের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক চাহিদা, গ্রোথ সেন্টার, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ঘরের উদ্বোধন করবেন।