বাণিজ্য বিভাগে রাজশাহী বোর্ডে শীর্ষ সিয়ামের পাশে এমপি-ডিসি
জেহাদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৫০ পিএম
অভাব-অনটনকে পায়ে ঠেলে নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অর্জন করেছে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. সিয়াম হোসেন।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের বিনয়পুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মো. দুলাল হোসেনের ছেলে সিয়াম হোসেন স্থানীয় বয়ড়া ভেন্নাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। বাবা দুলাল হোসেন কৃষিকাজ করতেন। গত আট বছর আগে ধরা পড়ে হার্টের অসুখ। সেই থেকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি আর আগের মতো শ্রম দিতে পারেন না। মা মোছা. ছামিয়া খাতুন গৃহিণী।
তাদের তিন ছেলেসন্তানের মধ্যে সিয়াম হোসেন প্রথম সন্তান। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যের জমিতে কাজ করে সংসারে কিছুটা সহযোগিতা করতেন। এখন ভালো কোনো কলেজে পড়তে গেলে ছাড়তে হবে বাড়ি। কিভাবে চলবে তাদের সংসার, কিভাবে চলবে বাবার চিকিৎসা, আর কিভাবেই চলবে ছোট দুই ভাইয়ের লেখাপড়া।
সিয়াম হোসেন যখন এমন চিন্তার মহাসাগড়ে হাবুডুবু খাচ্ছিল ঠিক এমনই সময় তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর) আসনের এমপি প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় ও জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
রোববার (৮ জানুয়ারি) বিকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সিয়াম হোসেনের হাতে নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দেন এবং হোস্টেলে থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করবেন বলে আশ্বাস দেন।
এরপর মঙ্গলবার সিয়াম হোসেনকে কাজিপুর থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে এমপি প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় তাকে নগদ ৩ হাজার টাকা সহায়তা করেন এবং লেখাপড়া খরচের দায়িত্ব নেন। তবুও সিয়াম হোসেন তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বোধ করছে।
এ বিষয়ে বুধবার বিকালে মোবাইলে কথা হয় সিয়াম হোসেনের সঙ্গে। সে জানায়, লেখাপড়া করে মানুষ হতে হবে এটাই আমার মূল লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যে শত বিপত্তিকে উপেক্ষা করে এসএসসি পরীক্ষার জন্য আমি দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা লেখাপড়া করেছি। পাশাপাশি বিনা বেতনে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়েছি। সৃষ্টিকর্তা তার ফলও দিয়েছেন। এতে আমি দারুণ খুশি।
জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, সিরাজগঞ্জের স্থানীয় একটি পত্রিকায় দেখতে পাই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এসএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে রাজশাহী বিভাগে ১ম স্থান অর্জন করেও কলেজে ভর্তি এবং লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছে না সিয়াম হোসেন। পরে তাকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ডেকে এনে স্বেচ্ছাধীন আর্থিক অনুদান তহবিল থেকে তার ভর্তি ও লেখাপড়া চালানো জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করি। এছাড়াও কোনো প্রয়োজন হলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে।
এমপি প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বলেন, সিয়ামকে ডেকে নিয়ে কিছু অর্থ সহায়তা করা হয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা ওর ভর্তি ও লেখাপড়ার সমস্ত দায়িত্ব আমি নিয়েছি। যখন যা প্রয়োজন হবে আমাকে জানালে তাকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।