সেই মহরম আলীসহ ১৩ পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ

বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২২, ০৫:৫৯ পিএম

বরগুনায় ছাত্রলীগের ওপর লাঠিপেটার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মহরম আলীসহ ১৩ পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে লাঠিপেটার ঘটনায় গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটি।
রোববার (২১ আগস্ট) বিকালে ওই রিপোর্ট দাখিল হয়েছে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি আকতারুজ্জামানের কাছে। যদিও ডিআইজি আকতারুজ্জামান এ ব্যাপারে কোনো কিছু বলতে রাজি হননি। তবে রেঞ্জ পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, তদন্ত রিপোর্টে ঘটনার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীসহ মোট ১৩ জনকে দায়ী করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত,
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে বরগুনা শিল্পকলা একাডেমি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে পুলিশ। একাডেমি মিলনায়তনে তখন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চলছিল শোক দিবসের অনুষ্ঠান। বরগুনা সদর আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
সভা চলাকালে জাতীর পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শিল্পকলা একাডেমি সংলগ্ন সড়ক দিয়ে ফিরছিল বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের নয়া কমিটির নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকরা। একাডেমি চত্বর অতিক্রমকালে তাদের লক্ষ্য করে শিল্পকলার দোতলা ও তিনতলা থেকে ইট-পাটকেল ছুড়ে আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেওয়া এমপি শম্ভুর অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
গত ২৪ জুলাই ঘোষিত ছাত্রলীগের নয়া কমিটির বিরুদ্ধে টানা ৩ সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছিল তারা। আন্দোলন চলাকালে নয়া কমিটির নেতাকর্মীদের ওপর বেশ কয়েকবার হামলা মোটরসাইকেল ভাংচুর এবং মারধরের ঘটনা ঘটে। এমনকি শোক দিবসের সকালেও নয়া কমিটির নেতাকর্মীদের ওপর একদফা হামলা মারধর এবং মোটরসাইকেল ভাংচুর চালানো হয়।
ফুল দিয়ে ফেরার পথে শিল্পকলার ওপর থেকে চালানো হয় দ্বিতীয় দফা হামলা। নিচে থাকা নেতাকর্মীরা পাল্টা ইট-পাটকেল ছুড়লে সংঘর্ষ বাঁধে দুপক্ষে। এক পর্যায়ে নিচে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। ইট পাটকেল নিক্ষেপের এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের একটি গাড়ি। ইটের আঘাতে আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
এতে ক্ষোভ ছড়ায় সেখানে থাকা পুলিশের মধ্যে। শিল্পকলা ভবনে থাকা এমপি শম্ভুর অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে তারা। এর আগে শিল্পকলায় থাকা নেতাকর্মীদের নির্বিঘ্নে চলে যেতে দিতে বলেন শম্ভু। এ নিয়ে তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় সেখানকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীর। এমপির সঙ্গে বাগবিতণ্ডাসহ বেপরোয়া লাঠিচার্জের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ালে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ।
ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ। সমাবেশ বিক্ষোভ থেকে চাকরিচ্যুতির দাবি জানানো হয় মহরম আলীর।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বরগুনা থেকে প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত করা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীকে। একই সঙ্গে আরও ৫ জন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে সংযুক্ত করা হয় ভোলা ও পিরোজপুর জেলা পুলিশে।
পরিস্থিতি শান্ত করতে পরদিন বরগুনায় যান রেঞ্জ ডিআইজি আকতারুজ্জামান। এমপি শম্ভুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পুরো ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত ডিআইজি ফারুককে প্রধান করে গঠিত হয় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। রোববার এ কমিটি তাদের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে রেঞ্জ ডিআইজির কাছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গত কয়েক দিনে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের সদস্য, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথা বলে কমিটির সদস্যরা। ঘটনার সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজও বিশ্লেষণ করেন তারা। সবদিক বিচার বিশ্লেষণ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীসহ মোট ১৩ জনকে দায়ী করে কমিটি।
তদন্ত রিপোর্টে এদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং অসহিষ্ণু আচরণের অভিযোগ। পুলিশ চাইলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারত, কিন্তু তা না করে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করা হয়েছে উল্লেখ করে তদন্ত রিপোর্টে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করা হয়।
রেঞ্জ পুলিশের দপ্তর থেকে অভিযুক্ত ১৩ পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে ৬ জনের নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তারা হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলী, বর্তমানে ভোলা জেলা পুলিশে সংযুক্ত বরগুনা সদর থানার সদ্য সাবেক এএসআই মো. সাগর, পুলিশ কনস্টেবল মো. রবিউল ও কেএম সানি, বর্তমানে পিরোজপুর জেলা পুলিশে সংযুক্ত বরগুনা জেলা ডিবির সদ্য সাবেক এএসআই মো. ইসমাইল এবং কনস্টেবল রুহুল আমীন। বাকি ৭ জনের নাম জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিস্তারিত কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান রেঞ্জ ডিআইজি আকতারুজ্জামান। বিষয়টি পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট দাখিল করেছে। বিষয়টি যেহেতু দাপ্তরিক তাই এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়।
অভিযুক্ত হলে সেক্ষেত্রে আলোচ্য পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারব না।