জলের উপর বিছানো থালার মতো গোলাকার সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে লম্বা ডগার উপর লাল সাদা পদ্ম। অসংখ্য পাপড়ির চমৎকার বিন্যাসে সজ্জিত একেকটি পদ্ম যেমন সুগন্ধি ছড়ায়, তেমনি যেকোনো মানুষের হৃদয় কাড়ে সহজেই। তাই হয়তো পদ্ম কাটার যন্ত্রণা ও এর স্পর্শ থেকে আটকে রাখতে পারে না যেকোনো বয়সের মানুষকে। 

পদ্ম ফুল শুধু যে বিশুদ্ধতা, সৌন্দর্য ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে মানুষের মনোহরণই করে তা নয়, খাদ্য ও ওষুধি গুণ হিসেবে পদ্ম আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। ‘সুগন্ধি’ বা ‘অ্যারোমা’ হিসেবে প্রসাধনী শিল্পে পদ্ম ব্যবহার করা হয়। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, পদ্মের এন্টি অবেসোজেনিক ও এন্টি ডায়াবেটিক ওষুধি গুণ আছে। এছাড়া রয়েছে ন্যুসিফেরিন, অ্যাপোরফিন ও আরমেপ্যাভিন জাতীয় অ্যালকালয়েড।

পদ্ম ফুল সাধারণত সাদা, গোলাপি অথবা হালকা গোলাপি রংয়ের হয়। অনেকেই লাল শাপলা আর পদ্ম ফুলের মধ্যে মিল থাকার কারণে চিনতে ভুল করেন। কিন্তু এর বীজপত্র ভালোভাবে দেখলেই পার্থক্য বোঝা যায়। আবার কাশ্মীর আর ইরানে নীল বর্ণের পদ্ম ফুলের দেখা মেলে যাকে নীল পদ্ম বা নীল কমল বলে।

এক সময় আমাদের দেশে পুকুর কিংবা বিলে-ঝিলে শোভাবর্ধন করে ফুটে থাকতো মনোহরি পদ্মফুল। কিন্তু প্রকৃতি বৈরিতা আর দূষণে পদ্মফুল এখন আর দেখাই যায় না। আর নগরে পদ্ম ফুল দেখতে পাওয়া দুষ্প্রাপ্যই বটে। 

সরেজমিন শুক্রবার রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মটবাড়িয়া পদ্ম বিলে দেখা যায় কয়েক একর পতিত জমিতে লাখ লাখ পদ্ম ফুল ফুটে আছে। দেখতে আসা দর্শনার্থীরা নিজের নিজেদের ইচ্ছামতো ফুল তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে ক্যামেরাবন্দি হচ্ছেন। 

পদ্ম বিলে গোয়ালন্দ থেকে ঘুরতে আসা দর্শানার্থী রঞ্জন রাহা বলেন, এখন আর তেমন পদ্ম ফুল দেখা যায় না। মানুষের মুখে মুখে শুনতে পেয়ে দেখতে এসেছি। তবে পদ্ম ফুলের কাছে যেতে অনেক প্রতিকূলতা পোহাতে হইছে। কাছ থেকে পদ্ম ফুল দেখে খুব ভালো লাগছে। বাড়িতে গিয়ে সবাইকে দেখার জন্য কয়েকটা পদ্মফুল নিয়ে যাচ্ছি। এখানে কেউ ফুল তুলতে বাধা দেয় না।

স্থানীয় অশোক বিশ্বাস বলেন, কয়েক বছর আগেও এখানে তেমন কেউ আসতো না। গত ২ বছর যাবত প্রচুর নারী-পুরুষ এই পদ্ম বিলে ফুল দেখতে আসেন। 

উল্লেখ্য, বেশিরভাগ খাল-বিল জলাশয়ে জল না থাকায় দিন দিন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে পদ্মের মতো অনেক জলজ উদ্ভিদ।