উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে যমুনা নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জের দুটি পয়েন্টেই বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার কাজিপুর পয়েন্টে ১২ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে যমুনা চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা।
রোববার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন ও পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, জেলার কাজিপুর পয়েন্টে ১৮ জুন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৯ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত ১১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় জেলার কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৩৬ মিটার। বর্তমানে পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৪৭ মিটার। এখানে পানির বিপৎসীমার স্তর ধরা হয় ১৫ দশমিক ২৫ মিটার। এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবোর পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান জানান, সকালে শহরের হার্ড পয়েন্ট এলাকায় পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪৭ মিটার। এর আগে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ দশমিক ৪১ মিটার। এখানে বিপৎসীমা ধরা হয় ১৩ দশমিক ৩৫ মিটার। ফলে এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু তিস্তায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, সে কারণে যমুনায় আরও কয়েক দিন পানি বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে সিরাজগঞ্জে বন্যা হতে পারে।
এদিকে প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিকভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনার চরাঞ্চলের নিচু জমিগুলো তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। ফলে যমুনার পাশাপাশি ফুলজোড়, করতোয়া, বড়াল, হুড়াসগর, ইছামতীসহ চলনবিলের নিম্নাঞ্চলও চরাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় কাঁচা পাট, তিল, কাউন, বাদাম, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের উঠতি ফসল নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষক।
অপরদিকে, যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজিপুর, চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরের চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙন এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কাজিপুরের তেকানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনার রশিদ বলেন, যমুনায় পানি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। চরাঞ্চলের মাঠগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন তারা।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া মুন্সী জানান, গত চার দিনেই চরবয়ড়া, বর্ণি, দোরতা, সয়াশাখা ও কাটাঙ্গা চরের নিচু জমিগুলো প্লাবিত হয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চরম বিপাকে পড়বে এ অঞ্চলের মানুষ।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে দুটি পয়েন্টেই বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ভাঙনসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।