পদ্মা সেতু চালু হলে কেমন হবে দৌলতদিয়ার চিত্র
হেলাল মাহমুদ, রাজবাড়ী
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২২, ০১:৩৬ এএম
স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়া এখন শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে এটা নিশ্চিত যে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বদলে যাবে পুরো বাংলাদেশসহ দৌলতদিয়া ঘাটের চিত্র। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের অর্থনৈতিক-সামাজিক মুক্তির দ্বারও দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। ভোগান্তির অপর যে নাম ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। সেই নৌরুট এখন হবে স্বস্তির অপর নাম।
পদ্মা সেতু চালু হলে চিরাচরিত রূপ পাল্টে যাবে এই নৌরুটটির। এছাড়াও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ কমাসহ ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ক্ষতি হবে। দৌলতদিয়ায় যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন অপেক্ষা করতে হতো সে অপেক্ষা আর করতে হবে না। পদ্মা নদী পাড়ি দেওয়ার জন্য দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন নদী পারাপার হতো। সেতু চালু হলে সে ভোগান্তি আর থাকবে না।
ঈদের সময়গুলোতে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যার কারণে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা। দিনের পর দিন নদী পারের অপেক্ষায় পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে অপেক্ষা করতে হয় খোলা আকাশের নিচে। মানবেতার জীবনযাপন করেন চালক ও চালকের সহকারীরা।
এছাড়া নদী পাড়ি দেওয়ার জন্য দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহণ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে অপেক্ষায় থাকতে হয় ফেরির। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিবহনের মধ্যে থেকে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন নারী, শিশু ও বয়স্কদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।
কিন্তু আশার কথা হলো- পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে এ নৌরুটে চাপ কমবে যানবাহনের এমনটাই প্রত্যাশা করছেন যাত্রী ও চালকরা। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যে ভোগান্তি পোহাতে হতো সেটার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। তখন আর ফেরির জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হবে না কোনো যানবাহনেরই।
এ বিষয়ে সৌহার্দ্য পরিবহনের দৌলতদিয়ার ঘাট সুপারভাইজার মনির হোসেন বলেন, গত-১৫ দিনে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যানবাহনের চাপ কমে যাওয়ায় অনেক মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাবার পথে। এ নৌরুটে দূরপাল্লার পরিবহণগুলো অনেকটা কমে গেছে বলে জানান তিনি।
দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার হোটেলের মালিক গফুর সেখ জানান, আমাদের হোটেলে এখন থেকেই খাবার খাওয়ার লোকজন কমে গেছে। পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের হোটেলও বন্ধ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ঘাটের অনেক হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নিয়মিত চলাচলকারী বিভিন্ন গ্রুপের পরিবহনের যাত্রী ও একাধিক পণ্যবাহী ট্রাকের চালকরা বলেন, ভোগান্তির অপর নাম ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এ নৌরুটে সব সময় যানজট ও দীর্ঘ গাড়ির সারি সব সময় লেগেই থাকতে। এখন আশা করছি সেই ভোগান্তি আর এখন আমাদের পোহাতে হবে না। পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে এই নৌরুটে অনেক যানবাহনের চাপ কমে যাবে। সেক্ষেত্রে খুব দ্রুতই আমরা নদী পার হতে পারবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের এ ভোগান্তি লাঘব হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই এই নৌরুটে যানবাহনের চাপ কিছুটা কমে যাবে। কিছু কিছু জেলার যানবাহন তখন সরাসরি পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ঢাকাতে প্রবেশ করবে। আবার ঢাকা থেকে তারা পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঢুকবে।